আমি কি প্রেগন্যান্ট?

ramoniyo am i pregnant?

চারু প্রথম বারের মত বাচ্চা নেয়ার জন্য চেষ্টা করছে। পিরিয়ডের ডেট আসতে এখন এক সপ্তাহ দেরি। কিন্তু সে প্রেগন্যান্ট কিনা জানার জন্য তার মন আর দেরি সইছে না। তাকে যেন এখনি জানতে হবে সে এই মাসে সত্যিই খুশির সংবাদ পেতে যাচ্ছে কি না। এদিকে পিরিয়ড হওয়ার এতো আগে প্রেগ্নেন্সি টেস্ট করেও লাভ নেই। 

চারুর মত অনেকেই এই সময়টা কাটায় অনেক বেশি উদ্বিগ্ন আর আশা নিয়ে, মনে থাকে হাজারো প্রশ্ন। তাদের জন্যই আজকের এই লেখা। আশা করছি আপনাদের পরিস্থিতি অনুযায়ি সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে সক্ষম হব।

প্রেগ্নেন্সির প্রথম সপ্তাহে কিছুই  বোঝা যায়না। কোন শারিরিক বা মানসিক পরিবর্তন এ সময় ধরা পরেনা। কিন্তু ২য় সপ্তাহ থেকে  হাল্কা গ্যাস এর সমস্যা শুরু হতে পারে। গর্ভ ধারনের কারনে বিভিন্ন হরমনের প্রভাবে বিপাকে বিলম্ব ঘটে, তাই গ্যাস এর সমস্যা ধীরে ধীরে ২য় সপ্তাহ থেকে বাড়তে থাকে। অধিকাংশ গর্ভবতী নারীরা অজানা কারনে নিজের গর্ভ ধারনের ব্যপারটি অনুভব করতে পারে।৩য় সপ্তাহে তলপেটের ডান দিকে বা বাম দিকে, কখনও উভয় দিকেই তীক্ষ্ণ চিনচিনে ব্যাথা অনুভূত হয়। খিদে বেড়ে যায় কয়েক গুন বেশি। সাধারনত গর্ভ ধারনের প্রাথমিক লক্ষন গুলো পিরিয়ডের পূর্বের লক্ষন গুলোর মতনই। তাই সবাই কম বেশি কনফিউশনে পরে যায়। গর্ভ ধারনের প্রাথমিক লক্ষন গুলো হলঃ

  • গ্যাস এর সমস্যা হবে প্রচুর ।
  • খিদে বেড়ে যাবে কয়েক গুন বেশি।
  • তলপেটের যে কোন একদিকে বা উভয় দিকে তীক্ষ্ণ চিনচিনে ব্যাথা অনুভূত হতে পারে।
  • মাথা ব্যাথা করা, মাথা ঝিম ঝিম করে বা মাথায় ভোঁতা অনুভূতি হয়।
  • বমি বমি লাগে , অনেকের নাও লাগতে পারে। 
  • শরীর অনেক দুর্বল লাগে। ঘুম পায় অনেক বেশি।
  • স্তনে ব্যাথা অনুভব করা।
  • ঘন ঘন প্রসাব পায়।
  • পিঠে বা মেরুদণ্ডে ব্যাথা অনুভব করা।
  • মুড সুইং করে অনেক বেশি। 
  • ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং যা পিরিয়ডের আগেই খুবই অল্প পরিমানে হয়ে থাকে, কখনও কখনও খুবই সামান্য মিউকাসে সাথে মিশে হলুদ বা বাদামি বর্ণের স্রাব যেতে পারে।
  • যাদের পিরিয়ডের আগে মুখে ব্রন হয় কন্সিভ করার পর তাদের এই সময় মুখ পুরো ফ্রেশ থাকে। অতিরিক্ত প্রজেস্টেরন নিঃসরণের কারনে এরকম হয়।
  • যৌন চাহিদা হটাত করেই কমে যায়।

সবার ক্ষেত্রেই যে একই লক্ষন প্রকাশ পাবে এমন কোন কথা নেই। আবার অনেকের ক্ষেত্রে লক্ষন গুলো এতো সুক্ষ হয় যে খুব ভালো করে খেয়াল না করলে বোঝা নাও যেতে পারে। অনেকের এইসব লক্ষন পিরিয়ডের আগেও প্রতি মাসে দেখা যায়, সেক্ষেত্রে তারা পুরোপুরি কনফিউশনে পরে যায় আসলে প্রেগন্যান্ট নাকি এটা পিরিয়ডের পূর্বাভাষ ! সেক্ষেত্রে পিরিয়ডের ডেট এর জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আপনার লাস্ট পিরিয়ডের ডেট থেকে ৩২ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে বাসায় প্রেগ্নেন্সি স্ট্রিপের মাধ্যমে সহজেই প্রেগ্নেন্সি টেস্ট করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে সকাল বেলার প্রথম ইউরিন সংগ্রহ করতে হবে। কারন সকাল বেলা HCG (Human chorionic gonadotropin) হরমন এর পরিমান বেশি থাকে। টেস্ট স্ট্রিপের ম্যাক্সিমাম লেভেল এর নিচে পর্যন্ত ইউরিনে ভিজিয়ে নিলে দেখা যাবে কন্ট্রোল লাইনে প্রথমেই লাল দাগ উঠবে, এরপর যদি আপনি প্রেগন্যান্ট হন তাহলে টেস্ট লাইনে এর লাল দাগটিও স্পষ্ট হবে,অনেক সময় হাল্কা দাগ দেখা যায় সেক্ষেত্রেও রেজাল্ট পজিটিভ ধরে নিতে হবে। আর আপনি যদি প্রেগন্যান্ট না হন তাহলে শুধু কন্ট্রোল লাইনে লাল দাগ স্পষ্ট হবে কিন্তু টেস্ট লাইনে কোন দাগ আসবেনা, সেক্ষেত্রে রেজাল্ট নেগেটিভ হবে। টেস্ট এর ১০ ইনিট পর কোন রেজাল্ট গ্রহন করা যাবে না।

প্রেগ্ন্যান্সি টেস্ট কিট যেকোনো ফারমেসিতেই পাওয়া যাবে। একটি স্ট্রিপ বা ডিজিটাল টুল একবারই ব্যবহার করতে পারবেন। কোম্পানি অনুযায়ি এগুলোর দাম বিভিন্ন হয়ে থাকে।

প্রেগ্ন্যান্সি টেস্ট টুল ছাড়াও আরও কিছু ঘরোয়া উপায়ে প্রেগ্ন্যান্সি টেস্ট করা যায়। যেমনঃ

  • শ্যাম্পু টেস্ট । সকালের প্রথম ইউরিন একটি পরিস্কার কাপে নিতে হবে। অন্য একটি পরিষ্কার কাপে পানি নিতে হবে। পানিতে সামান্য শ্যাম্পু ঢেলে দিতে হবে এমন ভাবে যেন কোন ফেনা না তৈরি হয়। এবার ইউরিন সেই পানিতে ঢেলে লক্ষ্য করতে হবে ফেনা তৈরি হয় কিনা। যদি ফেনা তৈরি হয় তাহলে রেজাল্ট পজিটিভ, আপনি প্রেগন্যান্ট। আর যদি কোন পরিবর্তন না হয় তাহলে রেজাল্ট নেগেটিভ।
  • লবন দ্বারা পরিক্ষা। সকালের প্রথম ইউরিন একটি পরিষ্কার কাপে নিয়ে তাতে কিছু লবন যোগ করুন। যদি দ্রবণটি ঘোলা বর্ণ ধারন করে তাহলে রেজাল্ট পজিটিভ আর যদি কোন পরিবর্তন না আসে তাহলে রেজাল্ট নেগেটিভ।
  • চিনি দ্বারা পরিক্ষা। সকালের প্রথম ইউরিন একটি পরিষ্কার কাপে নিয়ে তাতে কিছু চিনি যোগ করুন। যদি চিনি গলে যায় তাহলে রেজাল্ট পজিটিভ আর যদি চিনি গলে যায় তাহলে রেজাল্ট নেগেটিভ।
  • বেকিং সোডা দ্বারা পরিক্ষা। একটি পরিষ্কার কাপে সকালের প্রথম ইউরিন নিয়ে তাতে ২ চামুচ বেকিং সোডা জদ করুন। যদি সাথে সাথে বুদবুদ উঠে তাহলে রেজাল্ট পজিটিভ আর যদি কোন পরিবর্তন না দেখা যায় তাহলে রেজাল্ট নেগেটিভ।
  • টুথ পেস্ট দ্বারা পরিক্ষা। একটি পরিষ্কার কাপে সকালের প্রথম ইউরিন নিন এরপর এমন টুথ পেস্ট (যে টুথ পেস্টে কোন এক্সত্রা লবন বা ক্রিস্টাল নেই) যোগ করুন , যদি সাথে সাথে বুদ বুদ উঠে এবং ইউরিন নীল বর্ণ ধারন করে তাহলে রেজাল্ট পজিটিভ আর যদি শুধু বুদবুদ উঠে কিন্তু বর্ণ পরিবর্তন না হয় তাহলে তাহলে রেজাল্ট নেগেটিভ হবে।
  • ব্লিচিং পাউডার টেস্ট। একটি পরিষ্কার কাপে সকালের ইউরিন নিয়ে তাতে সামান্য ব্লিচিং পাউডার যোগ করুন। যদি পজটিভ হয় তাহলে সাথে সাথে বুদবুদ বা ফেনা উঠবে আর যদি নেগেটিভ হয় কোন বিক্রিয়াই ঘটবে না।
  • সাবান টেস্ট। একটি পরিষ্কার কাপে এক টুকরো সাবান নিয়ে তাতে ইউরিন ঢেলে দিতে হবে। তারপর ৫/৬ মিনিট অপেক্ষা করে দেখতে হবে যদি কোন ফেনা বা বুদবুদ উঠে তাহলে আপনি প্রেগন্যান্ট আর যদি কোন ফেনা বা বুদবুদ না উঠে তাহলে আপনি প্রেগন্যান্ট নন।

অনেক সময় প্রেগন্যান্ট হওয়ার পরেও বারবার টেস্ট করার পরেও রেজাল্ট নেগেটিভ আসে। HCG (Human chorionic gonadotropin) হরমনের তারতম্যের কারনে এমন হয়ে থাকে। তখন ক্লিনিক্যালি ইউরিন ও ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে সঠিক রেজাল্ট পাওয়া যায়। লাস্ট পিরিয়ডের ১ম দিন থেকেই প্রেগন্যান্সি এর ১ম দিন হিসেবে ধরা হয়। সে হিসেবে ৪/৫ সপ্তাহে সাধারনত আল্ট্রাসাউন্ড পরিক্ষায় কোন কিছু ধরা পরে না। আল্ট্রাসাউন্ড সাধারনত ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে করতে হয়।

যদি আপনি বাসায় পরিক্ষা করে জানতে পারেন যে আপনি প্রেগন্যান্ট তাহলে দেরি না করে নিকটস্থ গাইনী ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং প্রথম থেকেই ডাক্তারের অব্জারভেশনে থাকুন। ভারি কাজ একেবারেই পরিহার করুন, পর্যাপ্ত পরিমানে সবজি খান এবং পানি পান করুন। গর্ভ কালিন বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর এবং সমস্যার সমাধান পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।


Leave a Reply

Your email address will not be published.