সুনিপুণ রন্ধন শৈলী কাজে লাগিয়ে আমাতুর রাফি রাফা হলেন সফল ফুড ট্রেইনার


সুস্বাদু আর বাহারি পদের রান্নায় পারদর্শিতা কাজে লাগিয়ে রাফি রাফা হয়ে উঠলেন ফুড ট্রেইনার এবং অনলাইন উদ্যোক্তা। ফাস্ট ফুড, ইন্ডিয়ান ফুড, চাইনিজ ফুড, মিষ্টান্ন এবং বেকিং নিয়েই মুলত তার কাজ। আর বাহারি রকমের পানীয় তো আছেই। রান্নার স্বাদের সাথে তার উপস্থাপন ভঙ্গিমাতেও আছে বৈচিত্র।এনটিভি এর রিয়েলিটি কন্টেস্ট “নিউজিল্যান্ড ডিপ্লোমা মিষ্টির লড়াই” এ টপ সেভেনে ছিলেন তিনি মাত্র সতেরো বছর বয়সেই। বগুড়ার মেয়ে রাফিয়া রাফা নিজের দক্ষতা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যেই মুলত তার অনলাইন ফুড ট্রেইনিং গ্রূপটির উত্থান। এছাড়াও তিনি অনলাইন ফুড সাপ্লায়ার। আজ আমরা তার ফুড ট্রেইনার হয়ে উঠার গল্প শুনবো তার মুখে।

 

আপু আপনি কিভাবে রান্নার জগতে আসলেন তা জানতে চাই?

ছোটবেলা থেকে আব্বুকে মজার মজার রান্না করতে দেখতাম। তিনি রান্না করে খুব আগ্রহ নিয়ে আমাদের দুই ভাই বোন কে ডেকে খাওয়াতেন। আমরা একটা ডিশ শেষ করে এর পর আব্বু কবে আবার মজার কিছু রান্না করে খাওয়াবে সেই অপেক্ষায় থাকতাম। আব্বুকে সাহায্য করতে করতে রান্না আমার প্যাশন হয়ে গিয়েছে কবে সেটা নিজেও বলতে পারবো না। রান্নার বেসিক টা শিখেছি আব্বুর কাছে থেকে, বাকিটা শিখেছি নিজের অধ্যাবসায় আর কঠোর পরিশ্রমে। আসলে ছোট থেকেই আমার বিভিন্ন হার্বস আর মশলা বিষয়ে ধারণা ছিল। তাই খুব একটা সমস্যা হয়নি। 

এখন কোথায় কাজ করছেন?

আমার  অনলাইন ফুড শপ আর আমার একটা অনলাইন ট্রেনিং ইন্সটিটিউট এ ক্লাস নিচ্ছি। পাশাপাশি একজন শেফ ও ফুড ব্লগার ও বলতে পারেন। আর কিছু প্রোডাক্ট ও ব্র্যান্ড এর সাথে চুক্তি বদ্ধ আছি। 

কাজের পাশাপাশি আর কোন উদ্যোগ নিয়েছেন কি?

উদ্দ্যোগ নেয়া বলতে আমার দেয়া ট্রেনিং এর কারনে অনেকে তাদের নিজস্ব ফুড শপ করেছেন, অনেকে হোমমেড ফুড নিয়ে বাইরে কাজ করছেন। তাছাড়াও আমার শপ এর অনেক কর্মী রয়েছে, যাদের কর্মসংস্থান হয়েছে। 

আপনার ক্যারিয়ার এর সফলতা  সম্পর্কে জানতে চাই। 

আমি এনটিভি নিউজিয়াল্যান্ড ডিপ্লমা মিষ্টির লড়াই কন্টেস্টে টপ সেভেনে ছিলাম।সাড়া বাংলাদেশের বাছাই করা রাধুনিদের হারিয়ে টপ সেভেনে যাওয়াটা আমার জন্য একটা বড় সফলতা।একজন হোম কুক থেকে শেফ হওয়াটা সত্যি কতটা আনন্দের ছিল বলে বোঝানো যাবেনা। এখন আমার কাছে সেই সম্মানটা আছে যা আমি খুজছিলাম। আই অলয়েজ পুটিং মাই সেল্ফ অন দ্যা প্লেট। কোথাও শুনেছিলাম পৃথিবীর খাসা রান্না টা হচ্ছে নিজেকে কড়াই তে ঢেলে দেওয়া,তাহলে যারা খাচ্ছে  তারা সেই প্লেটে খুঁজে পাবে তোমাকে। শুরু টা তো ছিল শুন্য থেকে কিন্তু এখন আমার কাছে আমার নামের ইন্সটিটিউট আছে, যেখান থেকে অনেকেই কাজ শিখছে ,শুরু করছে নতুন কিছু নিজেদের জায়গা থেকে। আমার রেস্টুরেন্ট ওপেন হওয়ার পর মনে হয়েছিল আমার কাছে এখন একটা আইডেন্টিটি আছে, অনার অফ দ্যা রেস্টুরেন্ট। আমি নিজেকেই বলি জীবনে সফলতা চাই কি?  ভেবে দেখ তুমি কি চাও তুমি সফলতার পেছনে ছুটবে নাকি সফলতা তোমার পেছনে ছুটবে। যদি ২য় টা চাও তবে, সফলতার পেছনে ছোটা বাদ দাও। তুমি আগে ছুটলে সফলতা তোমার পেছনে ছুটবে। নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করে যাও, নিজের কাছে পারফেক্ট হও তবে  সফলতা পাবে।

কর্ম ক্ষেত্রে কোন বাধার সন্মুখিন হতে হয়েছে?

হুম বাধার সম্মুখীন হয়েছি কিন্তু সেগুলো কে বাধা বলে মনে হয়নি,  যে আব্বু আমাকে রান্না শিখিয়েছে সে আমাকে হাত কেটে,পুরে যাওয়ার ভয়ে খুব একটা রাধতে দিত না ।তা ছাড়াও কাজ করতে গিয়ে শিখেছি যে মেয়েদের সবসময় একটা লিমিটেশনের মধ্যে বেধে রাখা হয়, কিন্তু এটাই বলার আছে যে, ওপরে ওঠার সিরি গুলোয় কাঁকড় বিছানো থাকে। অনেকেই মেয়েদের উপার্জন করাটা ভালো চোখে দেখে না।কিন্তু আসলে আমার তাদের বাঁকা কথা শোনার সময় নেই।

তরুন দের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন যারা ফুড নিয়ে কাজ করতে চায়।

তরুণদের উদ্দেশ্যে এটা বলার আছে যে , যে পথ তৈরি করে প্রথম কাঁকড় টা তার পায়েই বিঁধে। ভেতর থেকে স্ট্রং হও কোন বাধাই আর বাধা থাকবেনা ।সময় টা যদি ২০২০ হয় তোমাদের চিন্তা ভাবনা যেন ২০২৫ এর মত হয়, থিঙ্ক ডিফারেন্ট। এই সেকটরে কাজ করতে হলে আগে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে, আগে রান্নাটা আয়ত্তে আনতে হবে, শুধু ইউটিউব দেখে রান্না করে ফেসবুক পেইজ খুললেই উদ্যোক্তা হওয়া যায় না। এমন কিছু দাও তোমার ক্রেতাদের যেন তারা তোমার রিপিট কাস্টোমার হয়ে যায়। তাহলেই তোমার সফলতা আসবে। 

ধন্যবাদ আমাতুর রাফি রাফিয়া আপু, আপনার সাথে অনেক সুন্দর সময় কাটলো,আমরা অনেক কিছুই জানতে পারলাম। আসলে যারা সমাজের বিভিন্ন স্তরে থেকে বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নকে গলা টিপে ধরছে আর ভাবছে আমি পারবো না, তারা আপনার এই কথা থেকে অবশ্যই অনুপ্রানিত হবেন আশা করি যে, “আসলে আমার তাদের বাঁকা কথা শোনার সময় নেই।” সত্যিই অনেক সুন্দর করে কথাগুলো বলেছেন।আপনার সার্বিক সফলতা কামনা করছি।যারা আপনার কাছে রান্না শিখে নিজের ক্যারিয়ার গড়ছেন তাদের জন্য রইলো অনেক অনেক শুভকামনা।আপু আপনাকে আবারো অনেক ধন্যবাদ। 


Leave a Reply

Your email address will not be published.