শামিমার সখের বাগান হয়ে উঠেছে আয়ের উৎস


ছোটবেলা থেকে বাগানের সখ থাকলেও এখন শামিমা রেবার বাগানের আকার দাঁড়িয়েছে ৫৫ শতাংশ আর বিশাল ছাদ বাগান তো আছেই। স্থানীয় কলেজের শিক্ষতার পাশাপাশি এই বাগান এখন তার অন্যতম আয়ের উৎস । আজকে আমরা শামিমার কাছ থেকে শুনবো তার বাগানের গল্প। 

আপু কতো টুকু জায়গা জুড়ে আপনার বাগান গড়ে তুলেছেন?

শা. রে. অনেক আগে খুব ছোট্ট পরিসরে শুরু করলেও এখন আমার বাগানের আকার ৫৫ শতাংশ পারিবারিক জমিতে। আর  ৩৩০০ বর্গফুট জায়গা জুড়ে আছে  ছাদবাগান।

কি কি ধরনের গাছ আছে এখানে? 

শা. রে. ছাদবাগান এবং জমির বাগান মিলে ফুল, ফল, সবজি, ঔষধি, মসলা, সৌন্দর্যবর্ধক, অর্কিডসহ প্রায় সবধরনের গাছ রাখার চেষ্টা করেছি এবং ভবিষ্যতে আরো কিছু নতুন ও আনকমন গাছ রাখার ইচ্ছে আছে।

আপু ফুলের গাছ কি কি লাগিয়েছেন? 

শা. রে. আমার বাগানে ফুল গাছের মধ্যে গোলাপ (লাল, কমলা, খয়েরি, সাদা, চেন্জিং কালার, চায়না গোলাপ ইত্যাদি) গাঁদাফুল গাছ আছে ৩ রঙের, বেলি,  রজনীগন্ধার আছে প্রচুর, হাসনাহেনা, জবা, ফুরুস ( লাল, সাদা), চন্দ্রমল্লিকা ৩ রঙের,  চামেলি, রঙ্গন ( লাল, গোলাপি, কমলা, চায়না রঙ্গন), রেইন লিলি ( গোলাপি, হলুদ), নীলকন্ঠ,  বাসরলতা, পর্তুলিকা ৩ রঙের, নাইটকুইন, দোপাটি (৪-৫ রঙের),  অপরাজিতা ( সাদা, নীল),নয়নতারা (৮ রঙের) সহ আরও বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছ আছে । কয়েক ধরনের  গোলাপ গাছের গ্রাফটিং করা শুরু করেছি, খুব শিগ্রই এগুলোর চারা বাজারজাত করা শুরু করব।

ফল গাছের কালেকশন কি কি আছে আপনার কাছে?

শা. রে. ফলগাছের মধ্যে মুলত আম (১৭ প্রজাতির), লিচু (৩ প্রজাতির), পেয়ারা (৩ প্রজাতির), লেবু (৩ প্রজাতির), থাই নারকেল, আমড়া,  চায়না কমলালেবু, জামরুল, জাম্বুরা, চালতা কলা (৩ প্রজাতির), লেবু (৩-৪ প্রজাতির ), লিচু , পেয়ারা, দেশি নারকেল গাছ, ভিয়েতনামী  নারকেল গাছ, সুপারী গাছ , কাঁঠাল গাছ, আমড়া, চালতা, জলপাই, বেলগাছ আর কলা (৫ প্রজাতির) আছে।

মসলা আর ঔষধি গাছের মধ্যে কি কি আছে? 

শা. রে. মসলার মধ্যে আছে তেজপাতা, এলাচ, মরিচ, চুঁইঝাল, অলস্পাইছি, হলুদ আর ঔষধি গাছ আছে হাড়জোড়া, তেলাকুচা, তুলসী আর নিমগাছ। 

এছাড়াও পাতাবাহার, ক্যাকটাস, বনসাই, কাঁটামুকুট, মেহেগুনি, কদবেল, ড্রাগনফলসহ আরও কয়েকটা প্রজাতির গাছ আছে আমার বাগানে। 

এই গাছ গুলোর মধ্যে কোন গাছটি আপনার সবচেয়ে প্রিয় এবং কেনো?

শা. রে. এই গাছগুলোর মধ্যে সবগাছই আমার পছন্দের, কিন্তু গোলাপ আর আম বেশি পছন্দ। কারণ, গোলাপ ফুলের সুগন্ধি বা সুবাসিত গন্ধ মুগ্ধ করে। আর আমের মধ্যে গোপালভোগ, হাঁড়িভাঙা, নাকফজলি, বারি -১১ আমার সবচেয়ে পছন্দের।

আপনার বাগানের পরিচর্যা করতে বাসার লোকেরা সাহায্য করে? 

শা. রে. আমার বাগানের পরিচর্যার জন্য বাসার লোকজন পানি দিতে, ছাদবাগান পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। আর ৫৫ শতাংশ ফলের বাগান সম্পূর্ণভাবে আমার বড়ভাই এবং আব্বার অবদান। বড়ভাই একজন চাকুরিজীবী হয়েও সময় বের করে বাগানের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে এবং বাগানের ১৭  প্রজাতির আম বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেছে।

কবে থেকে এবং কেনো মনে হলো যে শখের বাগান থেকে আয় করবেন?

শা. রে. ৫-৬ বছর ধরে ছাদবাগান করছি, অনেক গাছ আছে তাই চারাও হয় অনেক। এখান থেকে চারা বিক্রি করে  কিছু আয় হয় এবং বাগান সম্প্রসারণ এর কাজে খরচ করি। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে লেবুর কলম চারা।

আরও কি কি গাছ সংগ্রহে রাখার ইচ্ছে আছে?

শা. রে. আরও অনেক ধরনের গাছ যেগুলো আমার সংগ্রহে নেই, সেগুলো সংগ্রহ করতে চাই। দুর্লভ কিছু গাছ সংগ্রহ করতে চাই, যাতে আমার বাগান সম্মৃদ্ধ করতে করার পাশাপাশি দুর্লভ প্রজাতির গাছের বংশ রক্ষা করতে চাই।

এই বাগান গড়ার সময় কোন মজার স্মৃতি থাকলে আমাদের সাথে শেয়ার করুন

শা. রে. এই বাগান তৈরির সময় যখন যেভাবে পেরেছি, যেটাই পেয়েছি তাই লাগিয়েছি। মজার ঘটনা হচ্ছে আনারস গাছ ছোট্ট একটা টবে ৩ টা গাছ লাগিয়েছি, টব চেন্জ করতে গিয়ে কাঁটার গুঁতো খেয়ে  খেয়ে অবস্থা শেষ। একবার প্রচুর মরিচের চারা তৈরি করলাম, বাসার নিচতালার ভাড়াটিয়াসহ অনেকে উৎসাহী হয়ে মরিচগাছ লাগালাম কিন্তু কারও গাছেই মরিচ হলোনা। পরে ৪-৫ টা গাছ একটা টবে লাগিয়েছিলাম ৩ বছর ধরে মরিচ দিয়েছে।

কোন জিনিসের অভাব বোধ করেন যা আপনার বাগান কে আরও সমৃদ্ধ করে তুলতে পারতো?

শা. রে. আমার বাগানকে সমৃদ্ধ করতে আমার যেসব গাছ নেই বা টব নেই, অনেক সময় অনলাইলে বা অনেকের কাছে গাছ নিতে চাইলেও পাওয়া যায় না, ভাল মানের মাটি, জৈবসার এর কিছুটা অভাব, সময়ের অভাব,  জনবলের ও কিছুটা অভাব, সময় মতো যত্ন ও নেওয়া হয়না অনেক সময়। তারপরও গাছ আর বাগানকে ভালবাসার জন্যই অনেক কষ্ট স্বত্তেও বাগান করি। এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারলে আমার বাগান আরও সমৃদ্ধ হতো।


Leave a Reply

Your email address will not be published.