লেখিকার সাজানো ভালোবাসার বারান্দা বাগান


কংক্রিটের শহর ঢাকায় মনের মতো বাগান করা বড় দায়। এক টুকরো জমি যেন অমাবশ্যার চাঁদ। কাজেই শহুরে ফ্ল্যাট বাসিন্দাদের বাগানের জন্য বেছে নিতে ঘরের সাথে লাগোয়া বারান্দাকেই। আজকাল বারান্দার বাগানেই ফুল ফুটে, সেই ফুলেই প্রজাপতি ডানা মেলে। আজ আমরা মায়মুনা লীনার সুসজ্জিত বারান্দা বাগান নিয়ে কথা বলবো। এক সন্তানের জননী মায়মুনা লীনা একজন লেখিকা এবং প্রথম আলোর বন্ধুসভার প্রাক্তন সাহিত্য সম্পাদক। তাঁর জন্ম এবং বেড়ে উঠা নোয়াখালীর সুবর্নচর-এ। বর্তমানে ঢাকার উত্তরায় থাকেন। আশা করছি যারা নতুন বাগানী বা বারান্দায় বাগান করতে চান তাদের জন্য আজকের আলোচনা ফলপ্রসূ হবে।

পরিবারের সাথে মায়মুনা লীনা

আপু আজ আমরা আপনার বাগান নিয়ে কথা বলবো তাঁর আগে জানতে চাই আপনার লেখা বই সম্পর্কে, আপনার লেখা দু’ একটা বইয়ের নাম যদি বলতেন।

মায়মুনা লীনার গ্রন্থসমূহ

“খেয়ালী” এবং “ঝড়ের তোড়ে” নামে দুইটা উপন্যাস লিখেছি, “অনু-বোধের গল্প” নামে একটা গল্প সঙ্কলন, আর “অক্ষর” নামে ৩৬ জন লেখকের গল্প কবিতা নিয়ে একটা সম্পাদিত বই আছে। সবগুলো সিঁড়ি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত।

বারান্দা বাগানের বনসাই গাছ

 

 

বাগানের বাহারি ফুল

 

 

 

 

 

বারান্দা বাগানে পাখি

 

 

 

আপনি এখন কি করছেন?

এখন লেখালেখির সাথে জড়িত নেই। সর্বশেষ উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছিলো ২০১৬ সালে। সংসারের পাশাপাশি শখের কাজ হিসেবে পাখি পালন আর বাগান করা আর নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটে।

বারান্দা বাগানে ঝুলন্ত টব
বারান্দা বাগানে ফুলের মেলা

শুরুতে আপনি কোন কোন গাছ দিয়ে বারান্দা বাগান শুরু করেছিলেন। আশা করছি যারা নতুন বাগানী তারা আপনার কাছ থেকে ভালো আইডিয়া পাবে।

বাগান করার অভ্যাস ছোটবেলা থেকে। গ্রামের বাড়ির আঙিনায় বিভিন্ন দেশীয় ফুলের গাছ লাগানোর মাধ্যমে শুরু। শহুরের জীবনে বারান্দায় বাগান করার প্রথম থেকেই প্রাধান্য পেয়েছে বিভিন্ন রকম সুগন্ধি ফুল। সে হিসেবে প্রথম সংগ্রহ ছিলো একটা কামিনী গাছ। তারপর বেলী, শিউলি,  জুঁই, চামেলি, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ এগুলো সবই বারান্দা বাগানে যুক্ত হয়

বনসাই

এখন আপনার বারান্দা বাগান কোন কোন গাছ দিয়ে সাজানো।

এখন আমার শুধু বারান্দা বাগানে ছোট বড় মিলিয়ে দুইশ’র বেশি গাছ আছে। এরমধ্যে একই গাছের বিভিন্ন ভ্যারাইটি তো আছেই। যেমন গোলাপ ১২ রকমের, এডেনিয়াম ৯ ধরনের। জবা ১৬ রঙের, কাঁটা মুকুট ৮ রকমের। এছাড়া নীলমনি লতা, নীল পারুল লতা, নীলকণ্ঠ, নীল ঘণ্টা, নীল চিতা, দুই রকমের ঝুমকোলতা, অগ্নিশিখা, নাইট কুইন, টেক্সাস চেজ বা সিলভার কুইন, অরেঞ্জ মারমালেড, জ্যাত্রফা, স্বর্নঝরা, দোলন চাঁপা, মধু মঞ্জরি, মর্নিং গ্লোরি, কাঁটা মেহেদী, ট্রাম্পেট ভাইন, টিকোমা, পাঁচ রকমের অলকানন্দা, রক্ত কাঞ্চন, দুই রকমের ফার্স্ট লাভ ফুলের গাছসহ আরো টুকিটাকি কিছু সংগ্রহ। 

ঝুলন্ত টবে গাছ

বারান্দা বাগান করতে অনেকেই মাটি সংগ্রহ নিয়ে বিড়ম্বনায় পরে, আপনি কিভাবে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠেছেন? 

মাটি সংগ্রহ নিয়ে কখনো বিড়ম্বনা হয়নি। আগে আমি নিজে গিয়ে নার্সারি থেকে বস্তা হিসেবে মাটি কিনে আনতাম। এখন পরিচিত হয়ে যাওয়ায় যখন দরকার হয়, আমি বলে দিলে নার্সারির লোক বাসায় এনে দিয়ে যায়। আর যারা মাটি সংগ্রহ করতে একেবারেই অপারগ তাদের বলবো কোকোপিটের সাথে কেঁচো সার মিশিয়ে ব্যবহার করতে।

আপনার টবের মাটিতে কোন কোন সার ব্যবহার করেন? 

সারের মধ্যে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সারটাই ব্যাবহার করি। আর মাঝেমধ্যে সরিষার খৈল ভেজানো পানি ব্যাবহার করি এতে ফুল ফোটে অনেক বেশি আর কেঁচো সারের জন্য মাটিতে নাইট্রোজেনের ঘাটতি ও হয়না।

আপনার বারান্দার পরিসর অনুপাতে আপনার গাছের সংগ্রহ অনেক বেশি, আবার সেগুলো পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখা আছে, নতুন বাগানীদের জন্য কিছু পরামর্শ দিন কিভাবে স্বল্প পরিসরে অনেক গাছ সংগ্রহে রাখা যায়।

পরিপাটি করে সাজানোর ব্যপারটা আসলে সম্পুর্ন নিজের পছন্দ এবং রুচির উপর নির্ভর করে। শুধু খেয়াল রাখতে হয় কোন সিজনে বারান্দার কোন অংশে রোদ কম বেশী হয়, সেই অনুযায়ী যে গাছগুলো বেশি রোদে ভালো হয় সেগুলো সেরকম জায়গা বুঝে সেট করতে হবে। মরা ডালগুলো নিয়মিত ছাটাই করতে হবে, টবের মাটি সপ্তাহে অন্তত একবার খুঁচিয়ে দিতে হবে সাথে টবের মাটিতে জন্মানো আগাছা পরিস্কার করতে হবে নিয়মিত। গাছ লাগানোর সময়েই টবের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। টবের মাটিতে বা বাগানের কোনো জায়গাতেই কোনোভাবেই পানি জমতে দেয়া যাবে না।সর্বোপরি বাগান সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

বারান্দা বাগানের একাংশ

যারা ঠিক আপনার মতো বাগান করতে চায় তাদের জন্য কিছু বলুন।

নতুন বাগানীদের জন্য আমার পরামর্শ হলোঃ আপনার গাছগুলোকে প্রচুর সময় দিন। বুঝার চেষ্টা করুন কোন গাছ কোন ধরনের পরিবেশ এবং যত্ন পছন্দ করে, কোন গাছে পানি কম আর কোনটাতে বেশি লাগে, প্রয়োজনে ইউটিউব থেকে বা বাগান বিষয়ক বিভিন্ন গ্রুপ থেকে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারেন। একটা সময় দেখবেন- মা যেমন সন্তানের চেহারার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে সে কখন কী চায়, তেমনি আপনার গাছ দেখেই আপনি বুঝতে পারবেন কোন গাছের জন্য কখন কী করতে হবে। ফুল হোক বা না হোক গাছকে ভালোবেসে ধৈর্য নিয়ে যত্ন করে যেতে হবে। দেখবেন একসময় তারাও আপনাকে উজাড় করে ভালোবাসার প্রতিদান দিবে।

 

আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনার মুল্যবান সময় এবং পরামর্শের জন্য। আপনার বাগান আরো সমৃদ্ধ হোক এই শুভ কামনাই করছি। আমরা আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম আর আপনার মতো একজন গুনি মানুষের সাথে কথা বলতে পেরে নিজেকে খুবই গর্বিত মনে করছি। প্রিয় পাঠক আপনাদের যদি বাগান সম্পর্কে কিছু জানার থাকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন বা কমেন্টস করে জিজ্ঞেস করতে পারেন আমরা আপনাদের সমস্যার উপযুক্ত সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবো।


Leave a Reply

Your email address will not be published.