যশোহর স্টিচ ঘিরে রওশনের স্বপ্ন ও প্রচেষ্টা


যশোহর জেলার বিখ্যাত কাঁথা স্টীচ বা যশোহর স্টিচ আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী এক অনন্য অধ্যায়। সেই অধ্যায়ে রওশন যুক্ত করেছেন আরও কিছু নতুন মাত্রা। হিসাব বিজ্ঞানে গ্রাজুয়েশন,  পোস্ট গ্রাজুয়েশন করা রওশন কাজ করছেন যশোহর স্টিচে সেলাই করা শাড়ি ও থ্রি পিসের পন্য নিয়ে। আশ্চর্য ভাবে তিনি এই সেলাই দিয়ে শাড়িতে ফুটিয়ে তুলেছেন জামদানি নকশা ! রাজশাহী সিল্কের শাড়িতে এনেছেন নতুনত্ব। এযেনো বাংলার ঐতিহ্যের সৌন্দর্যে আরও কাঠি সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলার দারুন প্রয়াস। আজ আমরা তার সাথে কথা বলে জানবো তার অনলাইন ক্যারিয়ার এর স্যচনা, বাঁধা এবং সফলতার গল্প। চলুন সরাসরি চলে যাই আলোচনা পর্বে।

কিভাবে অনলাইন career এর সাথে যুক্ত হলেন, কি কি নিয়ে কাজ করছেন।

ব্যর্থতা আর ব্যর্থতা।ব্যার্থতা যে একজন মানুষকে এতটা সাফল্য এনে দিতে পারে, এটা ব্যার্থতা না এলে বোঝা যায় না। বাংলাদেশের সাধারন প্রেক্ষাপটে সবাই চায়, পোস্ট গ্রাজুয়েশন শেষ করে চাকরীজীবী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে। আমিও এর ব্যাতিক্রম ছিলাম না। তো সরকারী চাকরীর জন্য ভাগ্যদেবী প্রসন্ন হলেন না, আর বেসরকারী চাকরির জন্য পরিবারের সম্মতি ছিল না। 2017 এর মার্চের দিকে একদিন শুনলাম যশোর আইটি পার্কে একটা ট্রেনিং হবে।কী ট্রেনিং,  কারা করাবে কিছুই জানতাম না। কেবল দৌড়ে গিয়েছিলাম হুতোশে, কিছু একটা করতে হবে।গিয়ে দেখলাম ট্রেনিংএ প্রার্থী নির্বাচন শেষ, কোন ভাবেই আর কাউকেই নিতে পারবে না, যেহেতু ছিট সংখ্যা ফিলআপ হয়ে গেছে, সেখানের অজয়দাদা না বলার পর কেমন যেন চোখের কোনে পানি চলে এলো, সেটা অজয়দাদার দৃষ্টিগোচর হলনা।আমাকে শেষ ট্রেইনি হিসাবে লিপিবদ্ধ করেন।তারপর সাজটেল কম্পানিতে কলসেন্টার ম্যানেজমেন্টের উপর ট্রেনিং নি।ট্রেনিং শেষে আমাদের মেন্টর ইমানুর রহমান ভাইয়া চেয়েছিলেন, ট্রেনিংপ্রাপ্ত কয়েকজনকে নিয়ে ইকমার্স ভিত্তিক কিছু করা যায় কিনা!তো আমার ইকমার্সের হাতেখঁড়ি ইমানুর রহমান ভাইয়ার হাত ধরে। কিন্তু কিছু প্রতিবন্ধকতার কারনে আর একসাথে কাজ করা হল না। শুরু হল তারপর নিজের উদ্যোগে Rowshans Creations যশোর থেকে।আর খোজ পেলাম Razib sir এর গ্রুপ ইব্যাবের।ইকমার্স ভিত্তিক পড়া স্যারের পোস্ট থেকে পড়ে দক্ষ হয়েছিলাম।

আপনার বুটিকস এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য গুলো জানতে চাই যা অন্যদের থেকে আলাদা।

সবার থেকে যা ভিন্ন বৈশিষ্ট আমার বুটিকের-

প্রথমত ভিন্নতা বলতে যে বিষয়টা সেটা হল, সবার মধ্যে প্রবনতা থাকে ওমুক পেজের ডিজাইনটা ভাল ওটা নিয়ে তারা কপি করে।আমাদের পোজের বিশেষত্ব আমরা পেজে একদমই নতুন ডিজাইন লঞ্চ করছি ড্রেসের এবং শাড়ির। যা অন্য পেজ থেকে ভিন্ন তা আমাদের পেজে একনজর স্ক্রল করলেই বুঝতে পারবেন।শুধু ড্রেস না, সামনে কুর্তিসহ, শাড়ির ফ্যাশনে আরও কিভাবে বৈচিত্র আনা যায় সেটারও কাজ চলছে। আর যশোরের অরিজিনাল নকশীকাথা তো পাবেনই।

যশোহর স্টিচের পন্যগুলো কয়থায় থেকে সংগ্রহ করছেন? যারা এই বুননে সংযুক্ত তাদের সম্পর্কে জানতে চাই ।

আমার পেজের প্রায় সব পণ্যই যশোরের দুর দুরান্তের গ্রামের কর্মীদের সুই সুতোর ফোঁড়ের বুননে তৈরি।তারা সারাদিনের কাজের ফাকে ডিজািন দেয়া ডিরেকশন অনুযায়ী তাদের কাজ সম্পন্ন করে।তাদের সংসারের খরচ, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ, এমনকি একজনের মেয়ের বিয়ের জন্যও আমি ফিনানশিয়াল সাপোর্ট দিয়েছিলাম, যা তিনি কাজ করে দেনা পরিশোধ করেছিলেন।অনেকেই সচ্ছলতার মুখ দেখতে পারছে আলহামদুলিল্লাহ।এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।

কাজের ক্ষেত্রে কি কি বাধার সম্মুখীন আপনাকে হতে হয়েছে এবং কিভাবে তা মোকাবিলা করছেন?

কাজের ক্ষেত্রে যেসব বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন:কাজ করব আর বাধার সম্মুখীন হবনা, এটা কীভাবে সম্ভব!সঠিক সুপারভাইজার  এবং কর্মীদের কাছ থেকে কাজ বুঝে পাওয়া কঠিন একটা বিষয়।সাথে সামাজিক প্রতিবন্ধকতাতো থাকেই,  উচ্চশিক্ষিত হয়েও কেন চাকরীজীবী হলাম না, সেটার জন্য সহস্রবার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে কারো প্রশ্নের উত্তর দেবার চেয়ে নিজের কাজ ধারাবাহিকভাবে করে যাওয়াতে মনযোগী হয়েছি।যার কারনে এখন আর সে দিন নেই।

আপনার অনলাইন ক্যারিয়ারের এর সফলতা সম্পর্কে বলুন।

অনলাইন ক্যারিয়ারে সফলতা:

আমি যখন ২০১৭ তে যশোর থেকে ইকমার্স শুরু করি, তখন আমার এলাকার মানুষের এটা নিয়ে কোন ধারনাই ছিল না।সময়ের সাথে সাথে দেশের সব প্রান্ত সহ দেশের বাইরে থেকেও পেজে অর্ডার আসে।এখন আমার কাছে ব্যবসা প্রসার টা বড় বিষয় না, বরং সব সময় চেয়েছি উদ্যোক্তা পেশাটা উচ্চ সম্মানজনক মর্যাদা পাক।সেটাও উইমেন ইকমার্স ফোরামের মাধ্যমে পেতে শুরু করেছি।

যারা নতুন উদ্যোক্তা বা কোন উদ্যোগ নিবেন বলে ভাবছেন তাদের জন্যে কিছু বলুন।

যারা নতুন উদ্যোক্তা, তাদের জন্য বলতে চাই:অনুকরন না করে বরং নিজের কাজ ধীরে ধীরে প্রতিদিন একটু একটু করে যেতে থাকেন।একমাসে হয়ত সাফল্য পাবেন না।ধারাবাহিকতাটা এক বছর চালিয়ে যাবার পর পার্থক্যটা নিজেই পরিমাপ করতে পারবেন।আর আশে পাশের কারো কথায় কান দিবেন না। সাফল্য যখন পাবেন, জবাব তারা এমনিতেই পেয়ে যাবে।

আমরা আপনার সাথে কথা বলে অনেক কিছু জানতে পারলাম , কিভাবে একজন সাধারন মানুষ থেকে সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠলেন। আশা করছি নবীনদের জন্য আপনি পথিকৃৎ হয়ে থাকবেন। আপনার সাফল্য কামনা করছি আমরা রমনীয় পরিবার। আর সুধী পাঠক আপনারা যারা রওশনের পন্য সম্পর্কে জানতে চান এবং কিনতে চান তারা এখানে ক্লিক করুন।


Leave a Reply

Your email address will not be published.