বাংলাদেশের অন্যতম সফল নারী ফ্রিল্যান্সার অজন্তা


বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস থেকে পুরুস্কার প্রাপ্ত অজন্তা রেজওয়ানা মীর্জা একজন  ফ্রিল্যান্স লেখক, প্রূফরিডার ও ট্রান্সক্রাইবার। তিনি বাংলাদেশের একজন অন্যতম সফল নারী ফ্রিল্যান্সার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক করেছেন তিনি। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজ করতেন।চাকুরী ছেড়ে দেওয়ার পর  হটাত করেই ফ্রিল্যান্সিং এর জগতে তার পদচারনা আর একটির পর একটি সফলতা এবং স্বীকৃতি স্বরুপ এ্যাওয়ার্ড তিনি কুরিয়েছেন। বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সিং এর জগতে তিনি এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আজ আমরা তার সফলতার গল্প তার মুখেই শুনবো।

 

১. আপনার প্রথম পথ চলা সম্পর্কে জানতে চাই, কবে থেকে ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে জড়িত আছেন ?

আমি ফ্রিল্যান্সিংএ আসি ২০১৪ সালে। তার আগে আমি একটা এনজিও তে কাজ করতাম, জাগো ফাউন্ডেশন। আমি প্রায় দুবছরের চাকরিটা ছেড়ে দেই ম্যাটার্নিটি লিভে যাওয়ার সময়। বেবি হবার দু’মাস পরে আমি ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জানতে পারি। আমার প্ল্যান ছিলো এক বছর পর আবার চাকরিতে জয়েন করা।২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি অডেস্কে একটা একাউন্ট খুলি। দু সপ্তাহ ধরে আমার একাউন্ট সাজাই, আমার পোর্টফলিও বানাই। দু সপ্তাহ পরে আমি প্রথম একটা কাজে এপ্লাই করি, এবং তার সাত দিনের মাথায় অডেস্কে আমার প্রথম কাজটা পাই। তারপর থেকে আমি এই কাজই করে আসছি।

২. এখন আপনি কোন কোন বিষয় নিয়ে কাজ করছেন?

আমি প্রধানত একজন রাইটার/লেখক।ইন্টারনয়াশনাল মার্কেটপ্লেসে বলা হয় “কন্টেন্ট রাইটার” বা “ঘোস্ট রাইটার”।আমি ই-বুক, আর্টিকেল, ব্লগ, প্রোডাক্ট রিভিউ, ওয়েবসাইট কন্টেন্ট লিখি। আমার ৪/৫ জন পার্মানেন্ট ক্লায়েন্ট আছে যাদের ব্যবসার সব ধরনের লেখালেখির কাজ আমি করে দেই।আমার ক্লায়েন্ট মেইনলি ইউএস, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইনস ও ইউকে বেইসড।

৩. কি কি বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল এই পর্যায়ে আসতে?

বাসার কাজ, দুই বাচ্চা আর লেখালেখির কাজ সামলানো একসাথে খুব কঠিন হয়ে পরে। দিনে দুই ঘন্টার বেশি কাজে সময় দিতে পারি না। ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং করতে বেশ সমস্যা হয়। আমার ক্লায়েন্ট সবাই অন্য দেশে, তাই মিটিং সব রাতে পরে যায়।আমার কাজের সময় রাত ১২টা থেকে ২টা, নাহলে ভোর৬ঃ৩০ থেকে ৭ঃ৩০।

৪. অল্প কথায় আপনার ক্যারিয়ার এর সফলতা, আয় সম্পর্কে (শুধু ধারণা) জানতে চাই।

আমি ২০১৫ সালে বেসিস (BASIS) থেকে Best Freelancer Female Category Award পাই। ২০১৫তে আবার পাই Best Female Outsourcing Professional Award from ICT Division,Bangladesh.২০১৬ তে পাই Freelancer Meet Award (Best Freelancer). 

তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে আমি টিভিতে ইন্টারভিউ দিয়েছি ও পেপারে আমাকে নিয়ে আর্টিকেল লেখা হয়েছে।

আমার মাসিক আয় সর্বনিম্ন ৪৫০০০ টাকা। আয় আসলে কাজের ওপর ডিপেন্ড করে।

৫. নারী ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কোন আয় বৈষম্যের শিকার হতে হয় কি? 

এই ফিল্ডে আসলে ছেলে মেয়ে কোন ব্যাপার না। মেয়ে হিসেবে আমার কখনও কোন সমস্যা হয় নি। উল্টো, একজন মা হিসেবে আমি লাইফস্টাইল রিলেটেড অনেক কাজ পাই।

৬. সন্তান, সংসার সামলিয়ে সময়মত কাজ শেষ করতে পারবেন কিনা অনেক নারীই চিন্তায় থাকেন। তাদের জন্য কিছু টিপস দিন।

 কাজের জন্য সময় খুজে বের করা অনেক কঠিন। কিন্তু কাজ করার ইচ্ছা থাকলে সময় খুঁজে  নেয়া যায়। ভোরবেলা, অনেক রাতে বা দুপুরে যখন সবাই ঘুমে থাকে তখন কাজ করা যেতে পারে।

৭. কোন কিছুর অভাব বোধ করেন? যা আপনার স্বপ্নের লক্ষে আরও দ্রুত পৌঁছে দিতে পারতো? 

পরিবারের সবার সাহাজ্য অনেক প্রয়োজন এই ক্ষেত্রে। অবশ্য আমাকে কাজের জন্য বাইরে যেতে হয় না, তাই রাস্তায় আমার সময় নস্ট হয় না।

৮. তরুণ সমাজের জন্য কিছু বলুন যারা অনলাইন এ আয় করার কথা ভাবছে।

তরুনদের জন্য, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য যাদের পক্ষে বাইরে কাজ করা সম্ভব না, তাদের জন্য এটা খুব ভালো একটা সুযোগ। এই কাজে কোন রিস্ক নেই।

নতুনদের জন্য বলবো প্রচুর ধৈর্য (patience) থাকতে হবে। অনেক দিন লাগবে একটা ভালো জায়গায় পৌঁছোতে। কাজ জানতে হবে। যে কাজ করতে চান, খুব ভালো করে শিখে তারপর আসতে হবে।

অজন্তা রেজওয়ানা আপু আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ আমাদেরকে আপনার মুল্যবান সময় থেকে সময় দেয়ার জন্য এবং এতো মুল্যবান তথ্য শেয়ার করার জন্য। আমরা আশা করি আপনার কথা গুলো নবীন ফ্রিল্যান্সার দের পাথেয় হিসেবে কাজ করবে। । প্রিয় পাঠক আপনাদের মাঝে যারা কন্টেন্ট রাইটিং এ সফল ক্যারিয়ার গড়ার কথা ভাবছেন তাদের যদি ফ্রিল্যান্সিং ,কন্টেন্ট রাইটিং , কাজ কোথায় খুঁজতে হবে ইত্যাদি  সম্পর্কে কোন জিজ্ঞাসা থাকে বা কিছু জানার থাকে আপনারা অজন্তা রেজওানা আপুর পারসোনাল ব্লগ Content Writing with Azanta  এর ব্লগের মাধ্যমে বা সরাসরি জিজ্ঞাসার মাধ্যমেও জেনে নিতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত তথ্যগুলো।

 


Leave a Reply

Your email address will not be published.