ফ্লোরিডা এবং তাঁর তুমুল জনপ্রিয় ফেইসবুক গ্রূপ রিসাইকেল বিন


আপনার ঘরের অপ্রয়োজনীয় জিনিস অন্য কারো সংসারের প্রয়োজনীয় উপকরন হতে পারে। এই ব্যপারটিকে সামনে রেখে শুভেচ্ছা মুল্যে স্বল্প আয়ের স্টুডেন্ট, গৃহিণী, চাকুরিজিবীরা পেয়ে যাচ্ছেন তাদের কাঙ্ক্ষিত পন্যটি ফেইসবুক গ্রূপের মাধ্যমে। গ্রূপটির নাম Recycle Bin। সত্যিই চমৎকার একটি গ্রূপ। পশ্চিমা বিশ্বে সেকেন্ড হ্যান্ড পন্য ক্রয় বিক্রয়ের জন্য অনেক আগে থেকেই রয়েছে বড় বড় শপিং কমপ্লেক্স। যেখানে স্বল্প আয়ের মানুষরা অল্প ব্যবহৃত সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক, আসবাব পত্র, তৈজসপত্র থেকে শুরু করে যন্ত্র পাতি সবই ক্রয় করে থাকেন। বাংলাদেশে সেকেন্ড হ্যান্ড আসবাব পত্রের কিছু গ্রূপ থাকলেও এরকম সামগ্রিক ভাবে পন্য বেচাকেনার গ্রূপ এই একটাই, “রিসাইকেল বিন” গ্রূপ। মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষগুলোর জন্য এই গ্রূপটি যেন বাস্তব আলাউদ্দিনের প্রদীপ! আর মধ্যবিত্ত নতুন সংসারীদের জন্য এই গ্রূপটাই যথেষ্ট সাধ্যের মাঝে সকল প্রয়জনীয় জিনিস ক্রয় করার জন্য। রিসাইকেল বিন গ্রূপের স্রষ্টা ফ্লোরিডা শারমিন সেতু একজন ফার্মাসিস্ট। সাড়ে তিন বছরের পুত্র এবং ফার্মাসিস্ট স্বামীকে নিয়ে তাঁর পরিবার। পুত্র সন্তান ধরায় এলে সাত বছরের চাকুরীর অবসান ঘটিয়ে অনলাইন বিজনেস শুরু করেন। ফেইসবুকে তাঁর অনলাইন বিজনেস পেইজের নাম “Closet de Florida”। কিভাবে তিনি এই চমৎকার গ্রূপটি উদ্ভাবন করলেন আর এতো বিশাল পরিবারের গ্রূপ যা কি না প্রায় ৩ লক্ষ ৭০ হাজার ৬০০ জন, কিভাবে তিনি সামাল দিচ্ছেন এই বিড়াট জনসমষ্টি কে আজ আমরা তা তাঁর মুখ থেকেই জানবো।

পরিবারের সাথে ফ্লোরিডা শারমিন সেতু

 

Recycle Bin গ্রুপ এর আইডিয়া টা নিশ্চয়ই একটা চমৎকার আইডিয়া, এই যে কারো অপ্রয়োজনীয় বার্তি জিনিস অন্য কারো সখ বা প্রয়োজন হতে পারে,তারা শুভেচ্ছা মুল্যে ক্রয় করে সহজেই নিজের আশা পূরণ করতে পারে, এই আইডিয়াটা আপনার মাথায় প্রথম কবে এলো?

রিসাইকল বিনের আইডিয়া আসলে হুট করেই মাথায় আসে। সেলিব্রেটি আপুদের কে দামি দামি শাড়ি পরতে দেখেই ভাবতাম এগুলা উনারা একবার পরে তো আর পরে না!কি করে এইগুলা? এখান থেকেই এই রিসাইকল বিনের জন্ম।

 

বাহ বেশ চমৎকার! আমরা দেখতে পাচ্ছি যে খুবই অল্প সময়ে আপনার গ্রুপে প্রায় তিন লক্ষাধিক মেম্বার  অ্যাড হয়েছেন, এই ব্যপক জনপ্রিয়তা লাভ করার পেছনের রহস্যটা কি?

এই জনপ্রিয়তার কোনো গোপন রহস্য নাই আসলে। ১মাসে যা হয়েছে সবার সামনেই হয়েছে।আমি গ্রুপ খুলেছি ৫অক্টোবর ২০২০।মাত্র ৩দিনেই এমন ভাবে মেম্বার রিকুয়েষ্ট আসতে থাকে যে আমি হিমসিম খেয়ে যাই একা একা, তখনই মডারেটর নেই গ্রুপ কে মেইনটেইন করতে, আমার মনে হয় খুব স্ট্রিক্ট আমরা। গ্রুপের পরিবেশ টা ক্লিন রাখার ট্রাই করে যাচ্ছি যার কারনে এটার জনপ্রিয়তা টা বেড়েই চলেছে। আজকে পর্যন্ত গ্রুপের বয়স ৩৬ দিন মেম্বার ৩লাখ ৭০হাজারের উপরে।আর একটা কারন হচ্ছে, যখন সবাই দেখছে যে তাদের বাসার অপ্রয়োজনীয় পড়ে থাকা বার্তি জিনিসটা এই গ্রূপের মাধ্যমে কয়েক মুহূর্তেই বিক্রি করতে পারছে আর হাতে কিছু টাকাও আসছে ওদিকে ঘর বা আলমিরার স্পেসও খালি হলো তখন সবাই এই গ্রূপটাকে ভালোবেসে ফেলছে, নিজের কাছের মানুষদের সাথে ব্যপারটা শেয়ার করছে, তাদের ইনভাইট করছে গ্রূপে।এভাবেও কিন্তু জনপ্রিয়তাটা বেড়েই চলছে। অন্যদিকে দামি দামি পোশাক, ব্যবহার্য্য জিনিসপত্র খুব কম দামে পেয়ে যাওয়ার কারনে এক শ্রেনির ক্রেতার কাছেও গ্রূপের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

আপনার পরিবার এবং বিজনেস আছে Closet de Florida সামলে আবার গ্রূপ অর্গানাইজ করতে সময় কিভাবে ম্যানেজ করছেন?

আমার জন্য এটা খুবই প্রেশার ছিলো প্রথম বেশ কিছুদিন।একা হাতে সামাল দিতে হয়েছে, এখনো নিজের বিজনেস পেইজের থেকে এখানে বেশি সময় যায় আমার।তারপর ও  কো এডমিন আর মডারেটরস রা খুব হেল্প করছে। ওরা না থাকলে এটা পসিবল ছিলো না কখনো।

আপনার Closet de Florida সম্পর্কে কিছু বলুন।

Closet de Florida র জন্ম ২০১৮ সালে। ফার্মাসিস্ট হয়েও বিজনেস শুরু করি ছেলে হওয়ার পর। প্রায় ৭বছরের জব লাইফের ইতি টেনে বিজনেস লাইফ শুরু করি। clothing business এটা। প্রায় ৩৫ হাজার ফলোয়ার আছে এটাতে।

Recycle Bin পরিচালনা করতে কোন বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছে কি? কিভাবে সেই বাধা অতিক্রম করছেন?

বাধা তো প্রতিনিয়ত আসছে। ৩.৫ লাখ এর উর্দ্ধে মানুষ হ্যান্ডেল করাটাই অনেক বড় চ্যালেঞ্জ আবার যেখানে কোনো প্রফিট নাই। কিছু ফ্রড সেলার আছে কিছু ফ্রড বায়ার যারা অলয়েজ গ্রুপের পরিবেশ টা নষ্ট করতে চায়। খুব ঠান্ডা মাথায় এসব হ্যান্ডেল করতে হয় আপনাদের। ক্রেতা বিক্রেতার কমপ্লেইন তো খুব কমন ইস্যু। যতোটা পারি আমরা মিনিমাইজ করার ট্রাই করে যাচ্ছি।আবার কিছু ফ্রড গ্রুপ আছে যারা আমাদের নাম লোগো সব কপি করে মেম্বার্স দের কে বিভ্রান্ত করছে। আমরা গ্রুপে বার বার সতর্কতা বার্তা দিচ্ছি। এইভাবেই আসলে এখন পর্যন্ত আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সামনে হয়তো আরও বাধা আসবে কিন্তু আমরা প্রস্তুত সেসব বাধা সামলে সামনে এগিয়ে যেতে।

আপনার সফলতা আমাদের সাথে শেয়ার করুন।

এটা সফলতা কিনা জানি না আমি! আমি টাকা ইনকাম করে খুব পয়সাওয়ালা হয়ে যাই নাই এটা ঠিক। এক টাকাও এখনো গ্রুপ মেম্বার দের কাছ থেকে আমরা নেই নাই যেহেতু। কিন্তু এই সাড়ে তিন লাখ মানুষের দোয়া পেয়েছি এটাই অনেক বড় সফলতা।

 আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ফ্লোরিডা শারমিন সেতু আপু। নিঃসন্দেহে আপনি প্রচুর ব্যস্ত একজন মানুষ তারপরেও আমাদের সময় দিয়েছেন। আপনার অতি চমৎকার এই উদ্যোগ থেকে আশা করছি বাংলাদেশের জনসাধারন উত্তরোত্তর উপকারিতা লাভ করবে এই শুভ কামনা করছি। প্রিয় পাঠক আপনার অপ্রয়োজনীয়, বার্তি জিনিসগুলো রিসাইকেল বিন গ্রূপে নিয়ে হাজির হোন এবং  ঘরের জায়গা খালি করার পাশাপাশি কিছু শুভেচ্ছা মূল্যও পেয়ে যাবেন এখান থেকে। আর যারা মধ্যবিত্ত নতুন সংসারে জড়িয়েছেন এখান থেকে আপনি হেন কিছু নেই যা আপনার সাধ্যের মাঝে পাবেন না। গ্রূপটি ভিজিট করতে এখানে ক্লিক করুন।


Leave a Reply

Your email address will not be published.