প্রিয় মুখ কন্টেন্ট ক্রিয়েটর শামস আফরোজ চৌধুরী


সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইউটিউবের প্রিয় মুখ কন্টেন্ট ক্রিয়েটর শামস আফরোজ চৌধুরী। স্ট্যাম্ফোর্ড ইউনিভারসিটি থেকে বিবিএ এবং ঢাকা ভারসিটি থেকে এমবিএ করেন তিনি। তাঁর কন্টেন্ট গুলোর প্রতিটা চরিত্র মনে করিয়ে দেয় আমাদের আশেপাশে থাকা মানুষ গুলো কে। সাবলীল অভিনয় দক্ষতা আর হাস্যরসে মাতিয়ে রাখেন আমাদের কোটি দর্শকের মন। মাঝে মাঝে আমরা তাঁর কন্টেন্ট থেকে পেয়ে যাই কিছু সমাজ সেবা মূলক বার্তা। ভালোবাসার এই অভিনয় শিল্পি কার সহচার্যে নয়, কোন বড় স্যাটেলাইট চ্যানেল বা রিয়েলিটি শো নয়, নিজ গুনে তিনি স্থান করে নিয়েছেন আমাদের হৃদয়ে। পরিবারের বাবা,মা,ভাই,বোন,দাদী এবং প্রতিবেশীদের সাথে টক ঝাল মিষ্টি সম্পর্কের স্নেহ,ভালোবাসা খুঁজে পাই আমরা তাঁর রসিক ভিডিও গুলোতে। আজ আমরা কথা বলবো এই ভালোবাসার প্রিয় মুখ প্রিয় কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের সাথে। যিনি শুধু মাত্র কন্টেন্ট ক্রিয়েট করেই ক্ষান্ত হন নি, আমাদের কাছে পৌঁছে দিতে চান নারী অধিকার এবং সচেতনতা মূলক বার্তাও। আমরা তাঁর সাথে সরাসরি দূরালাপনি এর মাধ্যমে জানতে চেয়েছি তাঁর এই স্বতস্ফুর্ত অভনয় দক্ষতার রহস্য এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে। চলুন আমরা সরাসরি চলে যাই আলোচনা পর্বে।

আপনার শুরুর গল্পটা প্রথমে জানতে চাইবো, কিভাবে আপনার এই আইডিয়া টা আসলো যে আপনি ফানি ভিডিও এর মাধ্যমে সোশ্যাল এওয়ারনেস প্রচার করবেন।

আসলে শুরুর গল্পটা বলতে কি আমি যখন এমবিএ করছিলাম, যখন এমবিএ স্টুডেন্ট ছিলাম তখন থেকে আমি আমার কন্টেন্ট বানানো শুরু করি। কোন কিছু প্ল্যান করে আসলে তেমন কিছু করা হয়নি। তো দেখা যাচ্ছে যে পড়ালেখা করছি পাশাপাশি অন্যান্য জবের জন্য ট্রাই করছি, এর মধ্যেও একটু কন্টেন্ট বানাই, একটু মজা করে ভিডিও দিচ্ছি নিজেকেই ইন্টারটেইন করার জন্য। প্রথম দিকে শুধু নিজেকে এন্টারটেইন করার জন্য। তারপর যখন ফেইসবুকে ভিডিও গুলো পাবলিকলী আপলোড করলাম তখন দেখি যে মানুষও ভিডিও গুলোকে খুব ভালোভাবে নিচ্ছে। তখন মনে হলো আর একটু মোটিভেটেড হলাম, তখন মনে হল যে একটা ভিডিও তে মানুষের এতো রেস্পন্স পাচ্ছি তাহলে আর একটা দিয়ে দেখি তো কেমন হয়! এভাবেই আসলে শুরুটা। 

আপনার ভিডিও দেখে আমরা পার্মানেন্ট কিছু চরত্র আমরা খুঁজে পাই, আপনি একাই সমস্ত আইটিস্ট এর ভুমিকায় অভিনয় করে থাকেন, যে কেউ সব গুলো চরিত্র কে আলাদা ভাবে দেখতে পছন্দ করে! আপনি কি কোন অভিনয়ের কোর্স করেছেন বা নাট্য মঞ্চের সাথে যুক্ত ছিলেন? এই প্রতিভার পেছনের রহস্য টা কি?

না জীবনেও আমি কখনও এগুলোর সাথে জড়িত ছিলাম না, কোন কানেকশন ও ছিলো না! কোন দিনও কোন কোর্স করা হয়নি, নাটক তো না ই। এগুলো থেকে সব সময় দূরে ছিলাম। মানে হয়েছে কি রিয়েলিটি তে যা দেখি, রিয়েল লাইফে যে চরিত্র গুলো দেখি সেগুলোকেই অবজার্ভ করেই কিন্তু এই চরিত্র গুলো বানানো। তো ওভাবেই অ্যাক্টিং করার চেষ্টা করি আর সবার কাছে হয়তো এটাই রিয়েল মনে হয়, বাস্তব দেখেই অ্যাক্টিংকরার চেষ্টা। যেটাকে বলে কপি করা। আমাদের চারপাশেই কিন্তু এই চরিত্র গুলোকে আমরা দেখতে পাই।

বিভিন্ন চরিত্রে শামস

অনেকেই এখন আপনার মতো একাই এরকম ভিডিও বানাচ্ছে যারা কয়েকটি চরিত্রে একাই অভিনয় করে, কিন্তু আপনার মতো জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে নি, আপনার সতঃস্ফুর্ততা একটা দেখার মতো বিষয় এখানে। আপনার পেছনের উৎসাহ দিয়ে আপনাকে সহযোগিতা কে বা কারা করছেন? যাদের উদ্দিপনায় আপনি এতোদুর এসেছেন?

আমাকে সবচেয়ে বেশী ভিডিও বানানোর ক্ষেত্রে আমাকে গাইড করে, আমাকে সাপোর্ট করে, আমাকে সাপোর্ট না হেল্প করে আমার মা। আমি যখন একটা ভিডিও বানাই তখন আমি আম্মু কে দেখাই।দেখো তো আম্মু কেমন লাগছে? অনেক সময় দেখা যায় যে একটা ডায়ালগ দিলাম তখন ডায়ালগটা আম্মুর পছন্দ হয়নি, আম্মু বলে যে এই ডায়ালগটা দিস না। তো এভাবেই মা এরকম অনেক সময় ক্রিটিসাইজ করে বা সাপোর্ট দেয় ওভাবেই ভিডিও বানাই। আসলে মার সাপোর্ট তো অনেক এখানে আছে, এটা সত্যি কথা।

 

আপনার কাজের ক্ষেত্রে কোন বাধার সম্মুখীন কি আপনাকে হতে হয়েছে?

হ্যা এই কাজের ক্ষেত্রে তো শুরুর দিকে অনেক বাধার সন্মুখিন হতে হয়েছে যে কি করছি! কারন আমাদের দেশের মানুষ অনেকেই কিন্তু এখনও এই ইউটিউব, কন্টেন্ট ক্রিয়েট কি জিনিস এখনও বুঝেনা, অনেকেই বুঝে না। আমাকে অনেকেই যখন দেখত যে ভিডিও বানিয়ে ফেইসবুকে দিচ্ছি, তখন অনেকেই ভাবতো যে কি করছে, পড়ালেখা শিখে ভিডিও দেয় ক্যান! আমি অবশ্য জবও করতাম, কিন্তু আবার ভিডিও দিচ্ছি কেনো, এটাও অনেকে অবাক হতো, অনেকে ক্রিটিসাইজ করতো , হ্যা কি সব কথা বলে ভিডিও বানায়, হ্যা কি সব অভিনয় করে! এরকম অনেক ক্রিটিসিজমের শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু আসলে যখন আমি জানি যে আমার কাজ টা আসলে কি ,আমি কি করতে যাচ্ছি, তখন আমি তো জানি যে এটা ঠিক কাজ! আমি খারাপ কোন কাজ করছি না। তো এজন্য আমি এটা কন্টিনিউ করে গেলাম। আর সবচেয়ে বড় কথা আমার সাথে মা’র সাপোর্ট ছিলো, আমার হাসবেন্ড এর সাপোর্ট ছিলো, তো সেজন্য দেখা গিয়েছে যে বাকিদের কথা আর কানেই নেই নাই। আমার মা খুব এন্টারটেইন হতো, আমার হাসবেন্ড দেখে হাসত যে তুমি তো খুব হাসাইতে পারো!

মানুষ বলে যত বেশী জনপ্রিয়তা তত বেশী দায়িত্ব, আপনি অলরেডি প্রচুর সমাজ সচেতনতা বিষয়ক বিশেষ করে নারীদের জন্য ভিডিও তৈরী করেছেন, এর পাশাপাশি ভবিষ্যতে সমাজের জন্য আর কিছু করার ইচ্ছা বা পরিকল্পনা আছে কি?

অবশ্যই আছে! এখন যায় কি, এখন তো আসলে অনেক শো অফ এর যুগ। এখন যায় কি সমাজে যারা একটু বঞ্চিত, একটু হেল্প লেস, তাদের কে হেল্প করছে সেটাকেও ভিডিও করে রেকোর্ড করে আপলোডদিচ্ছে। এটা এক দিক দিয়ে ভালো, আবার নিজেরো একটা পাবলিসিটি হচ্ছে এটা তে। কিন্তু আমি দেখা যায় আমি না এই জিনিস টা করতে পারি না। আমি হয়তো অনেক জন কে হেল্প করছি কিন্তু কখনও সেটা কে ভিডিও করে যে আপলোড দিয়ে দিবো এটা কেন জানি আমি পারি না। আমি বলিও না। মানে এ জিনিসটা হয় না। কিন্তু এটা করলে হয় কি যে একজন কে দেখে আরোও দশ জন ইন্সপায়ার্ড হচ্ছে যে আমিও হেল্প করবো। এটাও একটা পজিটিভ দিক। কিন্তু আমি পারি না। তবে যে টা নিয়ে কাজ করেছি যেমন আমি রেপ নিয়ে অনেক কথা বলেছি, আবার রিসেন্টলী ছিলো ছেলে মেয়েদের স্মোকিং নিয়ে একটা বিষয়, যখন যেটা মেয়েদের পক্ষে কথা বলার যতটা পারা যায় চেষ্টা করেছি। জতটুকু সামর্থ আছে দেখা যায় যে হ্যা আমার আশপাশের অনেকে আছে বঞ্চিত একটু হয়ত আর্থিক ভাবে হেল্প করারা তাদের আমি চেষ্টা করি হেল্প করতে, কিন্তু পাব্লিকলী করিনা কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে চেষ্টা করি। 

আপনার সাথে কথা বলে অনেক ভালো লাগলো, যে সব নারীরা স্ট্রাগল করছে , নিজের পরিচয় নিজে তৈরী করার জন্য তাদের জন্য কিছু বলুন।

আমি বলবো যারা স্ট্রাগল করছে তাদের তো একটা স্যালুট দেওা উচিৎ! যে যেসব পুরো স্ট্রাগল করছে। স্ট্রাগলকরতে থাকুক কিন্তু যেন ধৈর্য্য হারা না হয়। স্ট্রাগল করতে করতেই দেখা যাবে তারা ভালো কিছু অ্যাচিভ করতে পারবে। কারন থেমে গেলে তো ইয়হেমেই গেলো। আমি ছেলে মেয়ে সবাই কে বলবো লাইফে স্ট্রাগল করতেই হবে ভালো কিছু পেতে হলে। আমি যখন কন্টেন্ট যখন বানাচ্ছি আমি তো কখনও ভাবি নাই যে আমার প্রফেশনই হয়ে যাবে ফুল টাইম কন্টেন্ট ক্রিয়েটর! আমি ছিলাম টিচিং প্রফেশনে। পাশাপাশি আমি ব্যাঙ্কের জন্য ট্রাই করছি , এম.বি.এ স্টুডেন্ট, সরকারী চাকুরীর জন্য ট্রাই করছি। অনেক কিছুর জন্য ট্রাই করছি, করতে করতে একটার মধ্যে হয়ে গিয়েছে। তো আমি সবাইকে বলবো একটার মধ্যে না, আমাদের চারপাশে কিন্তু অপর্চুনিটি ঘুরঘুর করছে, এর মধ্যে থেকে একটা কে গ্র্যাব করে ফেলতে হবে, চেষ্টা করতে হবে। এক জায়গায় না বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা করতে হবে, মানে আমার এখানে হচ্ছে না অখানে চেষ্টা করে দেখি, অখানে হচ্ছে না তো এখানে। করতে হবে, একসাথে তিন চার টা লাইনে চেষ্টা করতে হবে। তাহলে একটাতে না একটাতে হবেই। এটা আমার লাইফের এক্সপেরিয়েন্স থেকে বলছি।

শামস আফরোজ চৌধুরী

আপু আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনার সাথে কথা বলে অনেক ভালো লাগলো। আমরা অনেক কিছু জানতে পারলাম আপনার কাছ থেকে। আপনি আমাদের অনেক প্রিয় একটা মানুষ। আপনার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে আন্তরিক ভালোবাসা ও শুভকামনা রইলো। প্রিয় পাঠক শামস এর মজার মজার ভিডিও পেতে এখানে ক্লিক করুন   


Leave a Reply

Your email address will not be published.