নবজাতক শিশুর যত্ন কিভাবে নিবেন এই বিষয়ে বাসার বয়োজ্যেষ্ঠরা সব সময় আমাদের আদর্শ পথ নির্দেশক হিসেবে কাজ করে থাকেন। কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে আপনি যত্নশীল হবেন এবং কেন যত্ন শীল হবেন সে ব্যপারে একজন আধুনিকা মা হিসেবে আপনাকে অবশ্যই জ্ঞান রাখতে হবে।
আপনার বাসায় নতুন শিশু এসেছে, আত্মীয়, স্বজন এবং প্রতিবেশিরা সবাই কিছু না কিছু গিফট নিয়ে আসছে বাচ্চার জন্য । প্রসাধনি , জামা কাপর তো খুবই জনপ্রিয় উপহার এই ক্ষেত্রে। উপহার পেয়ে আবশ্যই খুশি হন কিন্তু শিশুর উপরে এসব প্রয়গ করার আগে জেনে নিন আপনার শিশু এখনও প্রস্তুত কি না এসব ব্যবহার করার জন্য। জানতে হলে পুরো ব্লগটা মন দিয়ে পড়ুন।
র্যাশ হলে কি করবেন?
নবজাতক এর র্যাশ খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার। এর জন্য কোন আলাদা চিকিৎসার প্রয়োজন নেই, শুধু সময়ের ব্যাপার। গলার র্যাশ দুই তিন দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়, মুখেরটা ঠিক হয় দশ থেকে চৌদ্দ দিন এর মধ্যে। এছাড়াও বুকে, পায়ে, হাতে র্যাশ বারবার হতে পারে। ছয় মাস পর্যন্ত এর আসা যাওয়া হতে পারে। এটা নিয়ে আলাদা দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই।
জিহ্বায় সাদা ছত্রাক কিভাবে পরিস্কার করবেন-
Oral thrush বা নবজাতক এর জিভে সাদা বর্নের ছত্রাক সাধারণত কোন রকম ক্ষতি করে না। এগুলো সাদা গোল গোল দাগের মত ও হতে পারে আবার একটা সাদা স্তর ও হতে পারে। Oral thrush মুখের ভিতরে চারপাশে ক্রীমের মত ও থাকতে পারে। আঙুলে পাতলা সূতী কাপড় প্যাচিয়ে এগুলো আলতো করে পরিষ্কার করা যায়। খুব বেশি পরিমাণে হলে শিশু ডাক্তার এর পরামর্শ নেয়া উচিত।
আঙ্গুলের ফাঁকে ময়লা জমে গেলে করনীয়
জন্মের পর থেকে ছয় মাস পর্যন্ত শিশুর হাতের ও পায়ের আঙুলের ফাঁকে, হাতের রেখার ভাজে কালো ময়লা জমে যায়, এগুলো সব সময় পরিষ্কার রাখতে হয়। একটা সূতী ভেজা কাপড় দিয়ে শিশুর হাত মুছে দিয়ে পুনরায় শুষ্ক সুতী কাপড় দিয়ে আলতো করে মুছে হাত শুকিয়ে নিতে হবে। নবজাতক শিশুর হাতে কোন moisture lotion ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। শিশুর বয়স এক মাস পার হলে moisturizer ব্যবহার করতে পারেন।
সর্দিতে বাচ্চাকে যেভাবে আরাম দিবেন
নবজাতক এর ঠান্ডা লেগে সর্দি হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। শিশুর সর্দি লাগলে শিশুর মাথার বালিশ টা একটু উচু করে দিতে হবে যেনো নিঃশ্বাস নিতে সুবিধা হয়। saline পানি কয়েক ফোটা নাকে দিয়ে suction টিউব দিয়ে সর্দি বের করতে হবে। suction টিউব আর নাকের জন্য saline পানি কিনতে পাওয়া যায়। শিশুকে ঘাম দিলে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে। ডাঃ এর পরামর্শ অনুযায়ী pediatric Alatrol দেওয়া যেতে পারে। সাধারণত এই সর্দি দশ থেকে চৌদ্দ দিন পর্যন্ত দীর্ঘ হয়।
ঘুমুতে জাবার পোশাক নির্বাচন
শিশুদের ঘুমানোর সময় যতোটা সিম্পল পোষাক পড়াবেন ততটাই তাদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। এক পিস গলা থেকে পা পর্যন্ত সূতীর পোশাক সবচেয়ে ভালো বিবেচনা। মুজা এবং টুপি কখনোই ঘুমানোর সময় পড়ানো উচিৎ না। শীতের সময় এক পিস এর উপরে শুধু একটা কম্বল দিতে হবে যেনো বাচ্চা উষ্ণতা পায় কিন্তু বেশি গরম না হয়ে যায়।
টামি টাইম
শিশুরা পিঠের উপরে ভর করে ঘুমায়। যখন জেগে থাকে তখন তাদের পেটের উপরে ভর দিয়ে রাখতে হয়, একে tummy time বলে। এতে শিশুর বৃদ্ধি ভালো হয়, ফ্ল্যাট হেড Syndrome, টুইস্টেড হেড এইসব সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। শিশু কে জন্মের তিন থেকে চার মাস পর থেকেই tummy time এ দিতে হবে। একদিনে কয়েকবার, প্রতিবার দুই থেকে তিন মিনিট করে। এই সময় শিশুর পুরো ভর তার পেটের উপরে থাকবে। এতে তার মাথা, ঘাড়, ঘাড়ের পেশী হবে মজবুত।
ডায়াপার কতটা উপকারি বা অপকারি
দুই হাজার সালে একটি গবেষণায় দেখা গেছে diaper ছেলে শিশুদের যৌন ক্ষমতা নষ্ট করে। disposable diaper বা none disposable diaper উভয় ক্ষেত্রেই শিশুর নিম্ন অংশে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে যা ছেলে শিশুর testicle এর উপরে প্রভাব ফেলে। ফলে ভবিষ্যতে এইসব শিশুর যৌন ক্ষমতা ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
গরমে শিশুর যত্ন
গরমে মাথা, হাতের তালু, পায়ের পাতা, গলা ছাড়া শিশুরা খুব বেশি ঘামে না। তাই খুব দ্রুত তাদের শরীর গরম হয়ে যায় যা heat stroke এর কারণ হতে পারে। শিশুকে আরাম দায়ক পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে হবে আর বেশি করে তরল খাবার দিতে হবে। অতিরিক্ত গরমে শিশুকে রাখা যাবে না। গরমে শিশুকে রোজ গোসল করান।
শীতে শিশুর যত্ন
শীতে আপনার সোনামুনি কে পরাতে পারেন উল আর ফ্লানেলের তৈরি সোয়েটার। খেয়াল রাখবেন সোনামণির ত্বকের দিকেও। কমপক্ষে দুই দিন পর পর আপনার শিশুকে গোসল করান। bath lotion বা bath soap সপ্তাহে দু দিনের বেশি দিবেন না, দিলে শিশুর ত্বকের প্রাকৃতিক তেল কমে রুক্ষ হয়ে যাবে। শিশুর বয়স এক মাসের কম হলে কোন ধরণের soap বা lotion ব্যবহার করা যাবেনা।শীতে অতিরিক্ত গোসল করালে শিশুর ত্বকের প্রাকৃতিক তেল কমে রুক্ষ হয়ে যাবে । তাই এক দিন পর পর আপনার শিশুকে গোসল করাতে হবে। খুব বেশী শীতে শিশুকে গোসল না করিয়ে কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে গা মুছে দিলে শিশু আরাম পাবে আর ঠান্ডাও লাগবে না।
গোসলের সময় যা অবশ্যই করবেন
গোসল করার সময় বা গা মুছে দেয়ার সময় চার টুকরো পাতলা সূতী কাপড় ব্যবহার করতে হবে। এক টুকরো মাথা মুছে দেওয়ার জন্যে, এক টুকরো চোখ মুছে দেওয়ার জন্যে, এক টুকরো মুখ মণ্ডল মুছে দেওয়ার জন্য আর এক টুকরো কাপড় শরীর মুছে দেওয়ার জন্যে ব্যবহার করতে হবে।
বসন্তকালে শিশুর যত্ন
বসন্ত কালে দিনে গরম আর রাতে ঠান্ডা viral fever এর প্রধান কারণ।এই জ্বরে হাত পায়ের muscle, জয়েন্ট ব্যথা,মাথা ব্যথা, সর্দি, কাশি থাকে। শিশুকে আরাম দায়ক সূতী পোষাক পরান আর রাতে একটা পাতলা কাঁথা দিয়ে ঢেকে দিন। খেয়াল রাখবেন যেনো বাচ্চা ঘেমে না যায়। ধুলো বালি তে রোগ জীবাণু বেশি থাকে তাই ধুলো বালি থেকে শিশুকে নিরাপদ রাখুন। সামান্য ঠান্ডা কাশি হলেই ডাঃ এর পরামর্শ নিন ।
শিশুর খাবার
শিশুর বয়স ছয় মাস হলে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার দিন। যেমন, সবুজ সবজি, শস্য দানা দিয়ে তৈরী খিচুড়ি,মাছ, ফল, সুজি ইত্যাদি। এই বয়সে বাচ্চাদের দুধ, গরুর মাংস, ডিমের সাদা অংশ খাওয়াবেন না। কারণ বাচ্চারা অতিরিক্ত প্রোটিন হজম করতে পারে না।
শিশুর দাঁত উঠছেনা !
আপনার শিশুর বয়স যদি এক বছর পার হয়ে যায় তবুও দাঁত না উঠে তাহলে চিন্তার কিছু নেই। অনেক সময় বংশ গত ভাবে অনেকের দেরিতে দাঁত উঠে থাকে। শিশুর দাদা দাদী, নানা নানী কে এ ব্যপারে জিজ্ঞেস করুন। কিন্তু আঠারো মাস পরেও যদি দাঁত না ওঠে তাহলে দ্রুত dentist এর সাথে যোগাযোগ করুন।
কেমন প্রসাধনি শিশুর উপযোগী
শিশুর ছয় মাস পর্যন্ত কোন তেল, সাবান, পাউডার , ক্রিম ব্যবহার করার প্রয়োজন পরে না। ছয় মাস পর এসব ব্যবহার করতে পারেন। এমন প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না যাতে পেরাবেন ব্যবহার করা হয়েছে। শিশুর প্রসাধনী ব্যবহারের ক্ষেত্রে উপকরণ গুলো ভালোভাবে দেখে ব্যবহার করুন। অবশ্যই জিঙ্ক সমৃদ্ধ পাউডার ব্যবহার করবেন। কারন জিংক এন্টির্যাশ হিসেবে কাজ করে।
এসব জরুরী বিষয় গুলোর গুরুত্ব বুঝতে পারলে এই যত্নগুলো নিতে কখনই ভুল হবে না। আপনার আদর আর জত্নে বেড়ে উঠুক আপনার সোনামুনি ।
(তথ্যসুত্র : InfantFashion )