ট্রাভেলিং এখন মেয়েদের হাতের মুঠোয় GLTB এর সাথে


একটা সময় বাসার ছেলেরা বন্ধুদের সাথে বেড়িয়ে যেত পাহাড়, বন আর সমুদ্রের ডাকে। কোন মেয়ে সাহস করে যদি বলতো, মা আমিও যেতে চাই, তাহলে শুনতে হতো সেই চিরন্তন বাক্য, বিয়ের পর স্বামীর সাথে ইচ্ছে মত ঘুরিস, এখন না! এখন দিন বদলেছে, বদলেছে যুগ। মেয়েরাও ট্যুরে যায়, শুধু যে যায় তাই না, অনেক মজাও করে। আর যায় ভ্রমন পিপাসু অন্যান্য মেয়েদের সাথে। মেয়েদের নিয়ে ট্যুরে যাওয়া আরোও কিছু গ্রূপ আছে, কিন্তু আজ যেই গ্রূপের কথা বলবো, এটা শুধু বড়লোকের মেয়েদের জন্য উন্মুক্ত না, বরং সবার জন্য উন্মুক্ত। বলছি ফেসবুক গ্রূপ গার্লস লাভ ট্যুর বাংলাদেশের কথা। আজ আমরা কথা বলবো GLTB এর প্রতিষ্ঠাতা ফারজানা মুন্নির সাথে। ফারজানা মুন্নী পড়াশোনা ইডেন মহিলা কলেজ বি এস সি সাইকোলজি ডিপার্টমেন্ট ৩য় বর্ষ। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা ইডেনের হলেই থাকা হয়। চার ভাই-বোন বাবা-মা’র ২য় সন্তান তিনি। তাঁর সাথে কথা বলে জানবো এই গ্রূপের ট্যুর সেফটি, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে সাথে থাকছেন তরুন প্রতিভা ফারজানা মুন্নি।

ফারজানা মুন্নি

বাংলাদেশে মেয়েদের ভ্রমণ নিয়ে খুব কমই গ্রুপ আছে যারা মেয়েদের ভ্রমণের ব্যবস্থা করছে, আপনি কবে থেকে এই আইডিয়া টা নিয়ে কাজ করছেন, একদম শুরুর সময়ের কথা জানতে চাই।

সিলেটের ট্যুর গার্লস লাভ ট্রাভেল বিডি এর সাথে

সাধারণত প্রতিটা মেয়ের পরিবার থেকে ভ্রমণে বাধা আসে, বলা যতো টা সহজ ঠিক তেমন পরিবারকে মানিয়ে একটা মেয়ের পরিবার ছাড়া একা ঘুরতে যাওয়া খুব কঠিন, আমরা পরিবারও এমনি ছিলো সন্ধ্যার আগে বাসায় আসতে হবে এমন, আমি মুক্ত আকাশে উড়তে শিখেছি ২০১৮ সালে আমার প্রথম ট্যুর ছিলো। যা ছিলো ১২ দিনের ট্যুর, কক্সবাজার থেকে শুরু করে রাঙামাটি গিয়ে শেষ করি, তখন থেকে আমার ঘুরা শুরু আর প্রথমে ফ্রেন্ড পরিচিত মানুষদের নিয়েই ট্যুর দিতাম, পরে সবাই আমাকে সব সময় বলতো যে একটা গ্রুপ ওপেন করো তুমি, এভাবে তো সবাই যাবে না যেতে ও চাইবে না, এর পর খুলবো খুলবো করে আর আমার গ্রুপ খোলা হয়নি, লকডাউনে সবাই কিছু না কিছু করছিলো তখন ভাবলাম যে এখন হয়তো টাইম দিতে পারবো খুলেই ফেলি একটা গ্রুপ যা হবার হবে।দেখতে দেখতে তিনটি সফল ট্যুর আমরা দিয়েছি এই গ্রূপ থেকে। ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে ইন্টেরন্যাশনাল ট্যুরের আয়োজন করার।

মেঘের রাজ্য সাজেকে ফারজানা মুন্নি

মেয়েদের ভ্রমণ নিয়ে প্রথম যে চিন্তা টা থাকে ‘সেফটি’, এটি কিভাবে ম্যানেজ করছেন?

এটা সবার প্রথমে সবাই আমাকে ট্যুরে বুকিং দেওয়ার আগে বলবে, আপু আপনার গ্রুপে কেমন সেফটি আছে? এমন প্রশ্ন আমি হলেও করতাম, এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যায় পরতে হয়নি আমাদের আলহামদুলিল্লাহ্‌, আর আমি প্রতি ট্যুরে যেখানে যাই না কেনো আগে থেকে ওই এলাকার কিছু মানুষের হেল্পের জন্য সব কালেক্ট করে রাখি ওদের জানিয়ে রাখি আমি সব, আর আমাদের সাথে একজন ছেলে গাইড নিয়ে নেই সেফটির জন্য।

সহস্রধারা ঝর্ণায় জলকেলি

এ পর্যন্ত কয়টি ট্যুর এর আয়োজন আপনারা করেছেন? ট্যুরের কোন মজার স্মৃতি আমাদের সাথে শেয়ার করুন।

আমার গ্রুপ টা তো ওপেন জুনের ২৭ তারিখ অল্প কিছু দিনে আমি সবার অনেক ভালোবাসা আর বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি এটা আমার কাছে অনেক কিছু, আমি গ্রুপ থেকে ৩ টা ট্যুরের আয়োজন করেছি, আমি খুব অল্প টাকায় ট্যুরের আয়োজন করি, তার কারন আমি যেমন আগে একটু একটু করে টাকা জমিয়ে ট্যুর দিতাম আমি জানি অনেকে টাকার জন্য ঘুরতে যেতে পারে না, ডিসেম্বরে আমাদের আর একটা ট্যুর আসবে ইনশাআল্লাহ্‌।

সীতাকুণ্ড ট্যুরে দলীয় ছবি

প্রথম ট্যুরে আমরা ৩৫ জন মেয়ে নিয়ে ট্যুর দিয়েছি তখন আমাদের সাথে একটা ফ্যামিলি ছিলো যা মধ্যে একজন ছিলেন ৮০ প্লাস বছর বয়সী এক নানু ছিলেন ওনি আমাদেন সাথে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠার জন্য অনেক টা পথ গেছিলো! যে ওনাকে দেখছে সেই অবাক যেখানে কিনা আমরাই এতো উচু পাহাড় কিনা উঠতে কান্নাকাটি অবস্থা সবার, আর ওনি কি সুন্দর পুরা ট্যুরে একটুর জন্য ও কান্ত হয়নি উল্টো সবাইকে সাহস দিয়েছেন পুরা ট্যুরে! 

সিলেট ট্যুরের পাহার নদীর মনোরম দৃশ্য

আমরা জানি যে কোন পরিকল্পনা তে কিছু বাধা আসে, আপনাকে কি কি বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিলো?কিভাবে সেই বাধা অতিক্রম করেছেন?

আমি ও জানি যে কোনো কাজই হোক না কেনো আপনার বাধা আসবেই, কিন্তু আমার তেমন কোনো বাধা আসে নাই, আমার ফ্রেন্ড আমার পরিবার সবাই আমাকে আমার কাজে সাহায্য করেছে, কিন্তু আমাকে এই গ্রুপের জন্য অনেক মানুষের অনেক অপমান অনেক কথা শুনতে হয়েছে, আমি প্রতিটা মানুষকে একটা সময়ে ঠিক প্রমাণ করে দিবো কি করতে পারি ইনশাআল্লাহ্। ইতিমধ্যে আমি তিনটা সফল ট্যুর দিয়ে প্রমাণ করেও দিয়েছি। যার কারনে আজ আমি এখানে।

ট্যুরে দলীয় ছবি

আপনার উদ্যোগের সফলতা সম্পর্কে কিছু বলুন। 

আল্লাহ্‌ রহমতে আমি সফল হয়েছি অনেকে বলেছিলো আমি পারবো না, কিন্তু না আমি পেরেছি, আমার গ্রুপের আপুরা আমাকে ভালোবাসে বিশ্বাস করে আমার আর কি লাগে! সিলেট ট্যুরে দু বোন আমাদের সাথে ট্যুরে গিয়েছিলো যারা কিনা কখনো ফ্যামিলি ছাড়া কোথাও যায়নি, এটা বেশি ভালো লাগছিলো যে আপু টার বাবা এসে বাসে তুলে দিয়ে গেছে। আমাকে কতো টা বিশ্বাস করলে একটা বাবা তার দুই মেয়ে কে আমার সাথে ট্যুরে যেতে দিয়েছে, আর একটা আন্টি আর ওনার মেয়ে গিয়েছিলো মেয়ে টা আমাকে বলে যে আপু জানো আমার আম্মু কাউকে বিশ্বাস করে না এজন্য আমাকে কোথাও দেন না ট্যুরে, আমার আম্মুর কাছে তোমার কাজ খুব ভালো লাগছে আম্মু বলছে তোমাদের সব ট্যুরে সে যাবে আর না যেতে পারলে ও আমাকে তোমাদের সাথে যেতে দিবে, এটার থেকে আর বড় পাওয়া কি আছে আমার বলতে পারেন!

নীলাভ পাহারে সূর্যদয়, প্রকৃতির হাতছানি

Girls Love Travel BD নিয়ে ভবিষ্যৎ কোন পরিকল্পনা বা স্বপ্ন আছে?

Girls Love Travel BD নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। আশা করি সকল অভিযাত্রিদের সহায়তা পেলে স্বপ্নগুলো পূরন করে ফেলবো। গ্রুপ থেকে ইন্টারন্যাশনাল ট্যুর প্ল্যান করার ইচ্ছে আছে সবার আগে ইন্ডিয়া তে ট্যুর দিবো পৃথিবী সুস্থ হলে, এখন যেভাবে আছে থাকুক দেখি কতো দূর যায় এই করোনা কালীন সময়ে!

ফারজানা মুন্নি

আপনার সাথে কথা বলে খুবই ভালো লাগলো। আমাদের অবরোধ বাসিনিরা মুক্ত বিহঙ্গে পাখা মেলুক পাহাড়-নদী-বনে আপনাদের সাথে এই শুভ কামনা রইলো। প্রিয় পাঠক আপনি যদি একজন মেয়ে হয়ে থাকেন তাহলে জইন করুন Girls Love Travel BD গ্রুপে এবং চোখ রাখুন পরবর্তি ইভেন্টে, ঘুরে আসুন ফারজানা মুন্নির সাথে দিগন্তের সীমানায়। 


Leave a Reply

Your email address will not be published.