আজকাল পড়ালেখা , সংসারের পাশাপাশি নারীরা তাদের অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে নিজের শখ আর দক্ষতাকে রুপান্তর করছে আয়ের উৎসে । নানা রকম দেশীয় পন্যের পসরা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় হাজির হচ্ছেন তরুণী, যুবতি, গৃহিণী সবাই । সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে তাদের প্ল্যাটফরম করে দিতে এগিয়ে এসেছেন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা মিতি নেওয়াজ । মিতি নেওয়াজের অন্যতম পন্য সিরাজগঞ্জের খাঁটি গাওয়া ঘি দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও পৌঁছে গেছে স্বগৌরবে। আজ আমরা মিতি নেওয়াজের কাছে জানবো তার সফলতা এবং তার ফেসবুক গ্রূপ অপরাজিতার গল্প ।
মিতি আপু আপনার প্রথম পথ চলা সম্পর্কে জানতে চাই, কবে থেকে অনলাইন বিজনেস এর সাথে জড়িত আছেন ?
মি. নে.- আজ থেকে প্রায় সাড়ে চার বছর আগে থেকে আমি অনলাইনের মাধ্যমে নিজের হাতে বানানো গাওয়া ঘি, বিভিন্ন ধরনের পিঠা, আচার পরিচিতদের মাঝে সরবরাহ করছি। প্রথমদিকে ঢাকা শহরে খাবার ডেলিভারি দেওয়ার একটি সমস্যা ছিল, এই কারণে বড় করে চিন্তা করতে পারিনি তখন।
আপু এখন আপনি কি কি পণ্য নিয়ে কাজ করছেন?
মি. নে.- এখন আমি সিরাজগঞ্জ এর গাওয়া ঘি (যেটি মূলত গরুর দুধের ক্রিম থেকে তৈরি), সুন্দরবনের বিভিন্ন ধরনের মধু, আচার, হাতে বানানো সেমাই, অর্গানিক বিভিন্ন ধরনের খাদ্য পণ্য এবং মেয়েদের পোশাক নিয়ে কাজ করছি।
আপনার ফেসবুক গ্রূপ অপরাজিতা ক্রিয়েট করার পেছনের গল্পটি জানতে চাই।
মি. নে.- সব সময় আমরা ভাবতাম সকল নারীরা যারা আসলে ঘরে বসে সংসার, বাচ্চা প্রতিপালন, বা পড়াশোনার পরে হাতে বেশ কিছু সময় পায় এবং তাদের মাঝে কিছু না কিছু ক্রিয়েটিভিটি রয়েছে। তারা সকলেই কিছু না কিছু করতে চায়। সব আপুদের কে একটি প্ল্যাটফর্ম দেয়া যেখানে সকলেই সকলের সুপ্ত প্রতিভাগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা, নিজেদের অভিজ্ঞতা, নিজেদের হাসি আনন্দ-বেদনা এগুলো যেন একত্রে আমরা একটি জায়গায় শেয়ার করতে পারি এটি ভেবেই আমি এবং আমাদের আরেকজন এডমিন, আফিয়া আফসানা আপু মিলে আমরা অপরাজিতা গ্রূপটি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি।
কি কি বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল এই গ্রূপটি গড়ে তুলতে?
মি. নে.- বাধা বলতে আমরা আসলে তেমন কোন সমস্যার সম্মুখীন হইনি, তবে অনেকেই হয়তো অনেক ভাবে দেখেছেন বিষয়টা, অনেকেই হয়তো ভাবেন এটি একটি বিক্রেতাদের সেল গ্রূপ, অনেকেই হয়তো পোস্ট করতে দ্বিধাবোধ করেছেন প্রথমদিকে, কিন্তু আস্তে আস্তে আমরা সকলেই একটি পরিবারের মতো হয়ে গেছি এবং অধিকাংশ যারা এক্টিভ সদস্য তারা একে অপরকে আমরা চিনি বা জানার চেষ্টা করি এবং অনেকেই আছেন যারা নিজেদের অনেক অব্যাক্ত কথা বা অব্যক্ত প্রতিভাগুলো এই অপরাজিতায় শেয়ার করতে পছন্দ করেন। যেটি আসলে আমাদের প্রাপ্য।
অল্প কথায় আপনার ক্যারিয়ার এর সফলতা সম্পর্কে জানতে চাই।
মি. নে.- সফলতা বলতে আগে আমি শখের বশে অনলাইন বিজনেস করতাম, আমি সবসময় চেষ্টা করি সকলকে সবথেকে খাঁটি মানের পণ্য সরবরাহ করতে এবং আমার ক্রেতাদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পেরেছি এটাই আমার সবথেকে বড় সফলতা।
কোন কিছুর অভাব বোধ করেন? যা আপনার স্বপ্নের লক্ষে আরও দ্রুত পৌঁছে দিতে পারতো?
মি. নে.- না আমি সব যেভাবে চেয়েছি সেভাবেই সবকিছু আলহামদুলিল্লাহ ঘটছে। আমার পরিবার, আমার শ্বশুর বাসার সকলেই, সর্বোপরি আমার স্বামী আমাকে আমার এই কাজে সবথেকে বেশি সহযোগিতা করে থাকেন তাই আমি খুশি।
আপু তরুণ সমাজের জন্য কিছু বলুন যারা অনলাইন বিজনেস এর মাধ্যমে আয় করার কথা ভাবছেন।
মি. নে.- আসলে আমি অতি সামান্য একজন মানুষ। তবে প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে অনলাইনে বিজনেস করে এতটুক বুঝেছি, আপনার নিজের পণ্যের গুণগতমান এবং আপনার ক্রেতাদের সাথে দেয়া কমিটমেন্ট যদি ঠিক থাকে তাহলে আপনি অবশ্যই সফলকাম হবেন। আপনার পণ্যের গুণগত মান যদি ঠিক থাকে তাহলে আপনি একই ক্রেতার কাছে একই পণ্য বিক্রয় করতে পারবেন। অবশ্যই ক্রেতার চাহিদা সাথে মিলিয়ে তাদেরকে পণ্য সরবরাহ করতে হবে।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মিতি নেওয়াজ আপু, আপনার অনলাইন বিজনেস এবং আপনার ৬০০০ এরও বেশি সদস্য বিশিষ্ট গ্রূপ অপরাজিতার আরও উন্নতি আরও সফলতা কামনা করছি। প্রিয় পাঠক আপনি যদি উদ্যোক্তা হয়ে থাকেন এবং আপনার পন্যের গুনগত মান যদি নিঃসন্দেহে খাঁটি হয়ে থাকে তাহলে আপনিও অপরাজিতার মাধ্যমে নিজের পরিচিতি , নিজের অনলাইন ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন স্বাচ্ছন্দে ।
আপনার উৎপাদিত ঘিয়ের মান ঠিক রেখে দেশে, বিদেশে সরবরাহ করে এগিয়ে যান এ কামনা করছি।
আমরাও সেই কামনাই করি।
অনেক সুন্দর হয়েছে আর্টিকেলটি। এরকম আরো চাই আপু।
ধন্যবাদ আপু। সামনে আরো আসছে, সাথে থাকবেন।