উদ্যোক্তাদের সম্ভাবনাময় প্ল্যাটফরম ফেইসবুক গ্রূপ ই-উদ্যোক্তা


অনলাইন উদ্যোক্তাদের ব্যবসায় সহযোগিতা করতে ফেইসবুকে গড়ে উঠেছে হাজারো ছোট বড় গ্রূপ। উদ্যোক্তারা ফেইসবুক গ্রূপের উপরে নির্ভর করেই চালিয়ে যাচ্ছে নিজেদের অনলাইন ব্যবসা। কিন্তু উদ্যোক্তাদের জন্য শপিং ওয়েবসাইট তৈরী করার চিন্তা ভাবনা করছেন এমন গ্রুপ হাতে গোনা আছে দু একটা। তেমনি প্রায় ২ লাখ সদস্যের একটি গ্রূপ  ই-উদ্যোক্তা (E-Enterpreneure)। প্রাথমিক অবস্থায় গ্রূপটি ফ্রীল্যান্সার দের জন্য গঠিত হলেও এখন এটি সকল ই-কমার্স সম্পৃক্ত উদ্যোক্তাদের জন্যও উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা আছে উদ্যোক্তাদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মসুচি এবং মিলন মেলা আয়োজন করার। আজ আমরা কথা বলবো ই-উদ্দ্যোক্তা গ্রূপ্রে এডমিন শাহারিয়ার নিশুর সাথে। চলুন সরাসরি চলে যাই আলোচনা পর্বে জেনে নেই এই গ্রূপের খুটিনাটি বিষয়ে।

এডমিন শারিয়ার নিশু

ই-উদ্যোক্তা গ্রূপটি একটি চমৎকার অনলাইন ইন্টারপ্রেনার দের প্লাটফর্ম, এর যাত্রার শুরুর গল্পটা জানতে চাই।

আসলামু আলাইকুম। আমি নিশু সিদ্দিকী , দেশের বাসা বরিশাল।  গ্রাজুয়েশন করেছি কুষ্টিয়া ইসলামিক ইউনিভার্সিটির আন্ডারে। কাজ করছি ওয়েবসি ইন্টারনেট সলুশনে একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে, পাশাপাশি আমি নিজেও একজন উদ্যোক্তা। ই-উদ্যোক্তা আসলে অনেক পুরোনো একটা প্লাটফর্ম, আমরা একটু সিরিয়াস ভাবে শুরু করেছিলাম সেই ২০১৭ সালে, যদিও তখন ইন্টারনেট ভিত্তিক এত উদ্যোক্তা দেশে ছিলো না, সেলফ ইমপ্লয়মেন্ট এর ধারনা টা তখনো এতটা জনপ্রিয় ছিলো না। তো আমাদের মুল টার্গেট ছিলো যারা ফ্রিল্যান্সিং করেন বা আউটসোর্সিং করেন, অনলাইনে উদ্যোগ বলতে আমরা ওয়েবসাইট, এডসেন্স, এফিলিয়েট মার্কেটিং এগুলোকেই বুঝতাম। পরবর্তীতে আমাদের গ্রুপের কিছু আপু তাদের নিজেদের উদ্যোগ শেয়ার করতে চান, আমরাও এতে সায় দেই। এভাবেই শুরু, আমাদের পরিবার তখনো বেশ ছোট ছিলো, কিন্তু মেইনস্ট্রিম পপুলারিটি শুরু হয় করোনাকালীন সময়ে। আপনারা জানেন ই যে এ সময় বহু মানুষ চাকরী হারান, অনেকের ব্যাবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়। তখন এরকম একটা প্লাটফর্ম কে বেশী গুরত্ব দেই আমরা, ফলাফল আজকের ই-উদ্যোক্তা।

গ্রূপ মেম্বার প্রায় ২ লাখের কাছাকাছি, অদূর ভবিষ্যতে কোন গেট টুগেদার বা মোটিভেশনাল ইভেন্ট এর সম্ভাবনা আছে কি?

হ্যা, যদিও এরকম একটা ইভেন্ট এরেঞ্জ করা বেশ কঠিন। দেশের ৬৪ জেলার নানারকম ছোটবড় উদ্যোক্তা কাজ করেন আমাদের সাথে, সেক্ষেত্রে একটা জায়গায় সবাই কে ডাকলেই সবাই অংশ নিতে পারবেন না। তবু আমাদের প্ল্যান আগামী বছর শূরুর দিকেই ঢাকায় একটা গেট টুগেদার পার্টি এরেঞ্জ করা। এবং সেটাকে সুধু আড্ডা না রেখে সেখানে যদি কিছু শেখা যায়, শেখানো যায়, তাতে তো কারো ক্ষতি নেই। 

এডমিন শিমুল শাহারিয়ার

উদ্যোক্তাদের আরোও উৎসাহ যোগাতে বা অনুপ্রাণিত করতে গ্রূপে কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়?

আমরা খুব রিসেন্টলী দুইটা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি।  আপনারা জানেন ই-উদ্যোক্তা পুরোপুরি একটা মেগামলের মত কাজ করে। এখানে অলমোস্ট সবকিছুই কিনতে পাওয়া যায়, কিন্তু এখানে শেখার কোন সুযোগ নেই। সবাই কেনাবেচা করতেই আসেন আমাদের গ্রুপে। তাই আমরা স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর উপর একটা নতুন গ্রুপ করেছি যেখানে মুল লক্ষ্য ই হবে শেখা এবং শেখানো, সেটা যেই বিষয়েই হোক। আরেকটা বড় পদক্ষেপ হতে যাচ্ছে একটা ওয়েবসাইট তৈরী করা । একটা অনলাইন শপ যেখানে আমাদের উদ্যোক্তারা তাদের পন্য বিক্রি করতে পারবেন। এতে করে আমরা সুধু ফেসবুকের কয়েক লাখ মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবো না, পুরো দেশের এক কোটির বেশী ইন্টারনেট ইউজার এর কাছে পৌছানো সম্ভব। আর ভবিষ্যতে ফেইসবুক বন্ধ করে দিলেও যেন কারো ব্যবসা বন্ধ হয়ে না যায়।

নিজের কেরিয়্যার এর পাশাপাশি এতো বড় একটা গ্রূপ সামলাতে কোন বাধার সন্মুখিন হতে হয় কি?

খুব ভালো একটা প্রশ্ন করেছেন, ক্যারিয়ার সামলে এ ধরনের একটা কমিউনিটি লিড করা খুবি কঠিন। আগেই বললাম, একটা আইটি ফার্মে কাজ করি, সেখানে সময় কম দিতে পারতেছি। তবে বাধা বলতে যা বোঝায় তা এখনো ফেইস করি নি। তবে কিছু ক্ষুদ্র প্রবলেম আমাদের প্রত্যেক উদ্যোক্তাই ফেইস করেন। এর মধ্যে কুরিয়ার সার্ভিসের মান নিয়ে আমাদের অভিযোগ থাকে। তারা পন্য ঠিকঠাক ভাবে পৌছাতে পারলেন কিনা, তাদের ক্যাশ অন ডেলিভারী তে চার্য, প্যাকেজিং এর নামে আলাদা  চার্য এই সমস্যা গুলোর সমাধান যদি হতো, তাহলে অনলাইনে কেনা আরো সহজ হতো, মানুষের আগ্রহ বাড়তো। একা এত বড় কমিউনিটি বিল্ড করা অসম্ভব। গ্রুপের শুরু থেকেই এডমিন হিসেবে শিমুল শাহরিয়ার ছিলেন। এডমিন প্যানেলে অসাধারন কিছু মানুষ আমাদের সাথে আছেন। ঐন্দ্রিলা শিকদার, তাসনিম এলাহী স্বরন, স্বর্নালী দেব নাথ আপু, অপু কর্মকার দাদা আছেন ই।

ভবিষ্যৎ কোন পরিকল্পনা আছে এই গ্রূপ নিয়ে?

অফকোর্স। আমাদের লক্ষ্য টা যদিও একটূ আলাদা। দেশের সবথেকে বড় কমিউনিটি হতে হবে বা সেরা এমন কিছু আমাদের লক্ষ্য না। আমাদের মুল লক্ষ্য উদ্যোক্তাদের সাপোর্ট করা, পুরাতন দের পাশাপাশি নতুন দের ও এই পথে নিয়ে আসা। সেক্ষেত্রে সবার জন্য একটা সেইম লেভেল প্লেয়িং গ্রাউন্ড তৈরী করাটাই মুল চ্যালেঞ্জ। গ্রুপের পাশাপাশি ই-উদ্দ্যোক্তা ওয়েবসাইটকেও দেশের একটা পরিচিত নাম করে তুলতে চাই। 

এখন পর্যন্ত এই গ্রুপের সফলতা  সম্পর্কে জানতে চাই।

এ গল্প অনেক বড়। প্রতিমাসে অন্তত দুহাজার নতুন উদ্যোক্তা তৈরী হচ্ছেন আমাদের প্লাটফর্মে। যারা মোটামুটি দারিয়ে গেছেন, অর্থাৎ তাদের মোটামুটি সেল আসতেছে। আবার যারা আমাদের টপ সেলার, তাদের কারো কারো মাসিক বিক্রি ২-৩ লাখ টাকার উপরে এবং তারা গ্রুপের প্রতি বেশ যত্নশীল টু বি অনেস্ট। সারাদিন অন্য কোথাও সময় নষ্ট না করে নিজেদের উদ্যোগের পেছনে দেন, ফলে তাদের সবাই চেনে।

উদ্যোক্তাদের উদ্দ্যেশ্যে কিছু বলুন যারা সোশ্যাল মিডিয়ার গ্রূপের উপরে নির্ভর করে নিজেদের পন্য বিক্রয় করে থাকেন।

প্রথমেই শিমুলের একটা কথা মনে পড়লো, ও বলে ” কাস্টমার না, সম্পর্ক বাড়ান” । কথাটা সত্য, অনলাইনে বিশেষ করে ফেসবুকে একটা ব্র্যান্ড দাঁড়িয়ে থাকে বিশ্বাসের উপর। সেক্ষেত্রে যারা আপনাকে বিশ্বাস করে, যাদের সাথে সম্পর্ক ভালো, তারাই কিনবে। আবার রাজিব আহমেদ স্যার একটা কথা বলেছেন, “যাকে চিনি, তার থেকেই কিনি”। তো নতুন দের উচিত বন্ধু বাড়ানো, তাদের সাথে একটা আত্বিক সম্পর্ক গড়ে তোলা। পাশাপাশি আপনাকে মনে রাখতে হবে বিজনেসের মুলে পন্য, পন্যের মান খারাপ হলে যত চেষ্টাই করেন, বিজনেস আগাবে না। অনলাইনে সবাই সবকিছু দেখতে পায়, সেক্ষেত্রে একটা বাজে রিভিউ বিজনেসের জন্য অনেক ক্ষতির কারন হতে পারে। শুরু করতে হলে আজকেই শুরু করেন, পরে করবো চিন্তা করলেই আর করতে পারবেন না।

আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাদের সময় দেয়ার জন্য আর উদ্যোক্তাদের নিয়ে এতো সুন্দর পরিকল্পনা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা জানি কোন সুন্দর কাজই খুব সহজ ভাবে সফল হয়না অনেক বাধা বিপত্তি কে হার মানিয়ে তবেই আসে সফলতা। আমরা আপনাদের সেই চুরান্ত সফলতাই কামনা করছি আর। আর প্রিয় পাঠক আপনারা যদি ক্রেতা হোন রকমারি পন্যের সমাহারে প্রবেশ করতে গ্রূপে জয়েন করুন অথবা আপনি যদি উদ্যোক্তা হয়ে থাকেন ই-উদ্দ্যোক্তা গ্রূপের সাথে যুক্ত হয়ে যান, অচিরেই হয়তো আপডেট পেয়ে যাবেন আপনার স্বপ্নের ওয়েব মেগামল ই-উদ্যোক্তা ওয়েবসাইট এর। পেয়ে যেতে পারেন ঘরে বসেই একটা নিজের শপ! গ্রূপে জয়েন করতে এখানে ক্লিক করুন।


Leave a Reply

Your email address will not be published.