আজকে আমরা জানবো ব্যবসার প্রতিযোগিতা কার বা কাদের সাথে করতে হবে , স্বল্প পুঁজির বিনিয়োগে বড় অর্ডার পেলে কিভাবে ম্যানেজ করবেন, পেইজ এবং পোষ্ট বুস্ট করে সেল বাড়ানো সম্ভব কি না এবং অনলাইন ব্যবসায় মোবাইল বা ল্যাপ্টপের জ্ঞান আসলে কতটা কাজে লাগে। আমাদের এই পর্বে আমাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করবেন অভিজ্ঞ সেলার সরমিন আক্তার সরমি আপু। তাঁর পরিচয় আমরা গত পর্বেই বলে দিয়েছি। আমরা এখন সরাসরি আলোচনায় চলে যাবো, যথারীতি সাথে থাকছেন সরমিন আক্তার সরমি আপু।
আপু অনেক নতুন অনলাইন উদ্যোক্তা প্রতিযোগিতা ব্যাপারটা বুঝতে পারেন না। কিসের প্রতিযোগিতা, কাদের সাথে প্রতিযোগিতা করবেন এবং কিভাবে, এ ক্ষেত্রে তাদের কিভাবে এগিয়ে যাওয়া উচিৎ।
ধরুন আপনি একটা প্রোডাক্ট সেল করবেন, আপনি সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে মাঠে নেমে পড়লেন। আপনি কিন্তু একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন যে অনলাইনে ওই একই প্রোডাক্ট নিয়ে আগে থেকেই কাজ করছে এমন মানুষ অনেক আছে।যাদের মাঝে আবার অনেকে সফল সেলার যারা খুব ভালোভাবে তাদের পন্য গুলো সেল করতে পারছে।আপনার প্রতিযোগিতা আসলে তাদের সাথে। তাদের এবং আপনার প্রোডাক্ট এর মান হয়তো একই কিন্তু কতটা নতুনত্ব আছে এই ব্যপারটা একটা ভাবার মতো বিষয় আসলে। অনেকেই দেখবেন হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে কাজ করছে, কেউ সূতির মধ্যে আবার কেউ রাজশাহী সিল্কের মধ্যে। আবার মধু অনেকেই সেল করেন তার মাঝে অনেকেই আবার নির্দিষ্ট ফুলের মধু যেমন কালিজিরা বা খলিসা ফুলের মধু সেল করেন যেটার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এরকম আমরা ভাত সবাই খাই কিন্তু চালের আকৃতির উপরেই কিন্তু স্বাদটা ডিপেন্ড করে। আমি আর একটু পরিস্কার করে বলি। অনলাইন মারকেট প্লেসটা আসলে একটা শপিং সেন্টারের মতই। যেখানে আমি গেলাম ধরুন শাড়ি কিনতে। পাশাপাশি অনেকগুলো শাড়ির দোকান,আমি সবগুলো দোকান ঘুরে নিজের মনের মতো একটা শাড়ি একটা দোকান থেকেই কিনবো। এখানেই আসলে প্রতিযোগিতার ব্যাপারটা চলে আসে। যে দোকানি আমার সাধ্যের মধ্যে, ভালো মানের এবং খুবই আনকোরা ডিজাইনের পোশাক আমার জন্য তার কালেকশনে রেখেছে দিন শেষে সেলটা কিন্তু তারই বাড়বে।আমি নিজে যেটা করি আমার ব্যবসার জন্য আমি সব সময় এক্সক্লুসিভ কিছু রাখি,এতে আমাকে বেশি অপেক্ষা করতে হয় না, সব সেল হয়ে যায়। যত দিন যাচ্ছে প্রতিযোগিতা বেড়ে চলেছে। প্রতিযোগিতা টা আসলে নিজের সাথে। নিজের মধ্যে কতটুকু সৃষ্টি করার গুণ আছে এটার মাধ্যমে টিকে থাকা। অন্যদের সাথে পাল্লা দিয়ে নিজের সৃজনশীলতা দিয়ে টিকে থাকাটাকেই আমরা বলছি ‘প্রতিযোগিতা’ ।
অনেক সময় ছোট ছোট উদ্যোক্তারা হঠাৎ করেই বড় অর্ডার পেয়ে যান বা একসাথে অনেক গুলো অর্ডার আসে, তারা সেগুলো সময় মত সবার চাহিদা পূরণ করতে পারে না, সে ক্ষেত্রে কি রকম পরিকল্পনা করে এগিয়ে যেতে হবে।
ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের কাছে অনেক সময় বড় অর্ডার চলে আসে এক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ যাদের পুঁজি থাকে অল্প তাদের কাছে অনেক বড় অর্ডার চলে আসলে তারা হিমশিম খেয়ে যায়, আবার অর্ডার অনুযায়ী কাজও করতে পারেন না। সেজন্য কাস্টমারের কাছ থেকে আগে থেকেই সবকিছু বলে নিতে হবে ।বড় অর্ডার আসলে এডভান্স নেওয়া যেতে পারে কারণ অনেকে অর্ডার দেয় পরে নাও নিতে পারে। সেলার দের এরকম বড় অর্ডার নিয়ে অনেক ভুক্তভুগী হতে হয়। যাদের পুঁজি কম তাদের ক্ষেত্রে এভোয়েড করাই ভালো। আর আপনি যদি এডভান্স টাকা নিয়ে কাজ করতে পারেন তাহলে পরিকল্পনার প্রয়োজন আছে যে আসলে আপনি কতদিনের মধ্যে আপনি পন্য দিতে পারবেন। এডভান্স দিয়ে পুরো কাজ করিয়ে নেয়ার পরও যদি কেউ অর্ডার ক্যান্সেল করতে চায় সেক্ষেত্রে আপনার কতটা ক্ষতি হল সেদিকে খেয়াল রেখে এডভান্স টাকা নেওয়া উচিৎ যেন কাজ শেষে কোন ক্ষতি না থাকে। অবশ্য এসব ক্ষেত্রে ক্রেতার কাছে স্পষ্ট বলে দেওয়া ভালো যে, এডভান্স দেওয়ার পর টাকা ফেরত দেয়া হয়না। কারন এক ক্রেতার পছন্দের জিনিস অন্য ক্রেতারা পছন্দ নাও করতে পারে এক্ষেত্রে সেল করতে প্রচুর সময় লাগতে পারে।
পোস্ট বুস্ট করে আসলেও কি সেল বাড়ানো সম্ভব?
বুস্ট করে সেল বাড়ানো সম্ভব নির্ভর করে বুষ্টের ধরনের উপরে। তারপর আরো নির্ভর করে প্রোডাক্ট কোয়ালিটির উপরে। আমার প্রোডাক্ট যদি ভালো না হয় বুষ্ট দিয়ে লাভ হবে না। আর বুষ্টের যদি রিচ ভালো না হয় প্রোডাক্ট ভালো হয়ে কাজ হবে না সেজন্য অনেক ভেবে-চিন্তে পোষ্ট বুস্ট করতে হবে। আপনি যে প্রোডাক্ট সেল করছেন তা মেয়েদের নাকি ছেলেদের জন্য,নাকি উভয়েই ব্যবহার করে? আবার অনেক পন্য আছে যেগুলো ছেলে মেয়ে সবাই ব্যবহার করে কিন্তু বেশিরভাগ সময় কেনে মেয়েরা, আবার কোন বয়সের ক্রেতারা আপনার প্রোডাক্ট বেশি কেনে, কোন এলাকার মানুষের নিকট এগুলোর চাহিদা বেশি, ইত্যাদি এসব বিষয়ে ডিটেইলস জানা থাকলে বুস্ট করলে আপনার চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতার নিকট আপনার পোস্ট পৌছে যাবে। তারপর সেল হওয়াটা নিরভর করে ক্রেতার উপরে আর আপনার দেওয়া পন্যের বর্ণনা ও ছবির উপরে। কাজেই আমি প্রোডাক্টের ছবি তুলে বুস্ট করে দিলাম আর সবাই কেনার জন্য দৌড়ে আসবে ব্যাপারটা তা না। বুস্ট সেটিংস এর কোয়ালিটি একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যারা ইএমাই কার্ড ব্যবহার করেন তারা নিজেরাই পছন্দ মতো সেটিংসদিয়ে পোস্ট বুস্ট করতে পারেন নাহলে ভালো প্রফেশনাল কারো কাছ থেকেও বুস্ট করিয়ে নিতে পারেন।
অনেক উদ্যোক্তা মোবাইল বা ল্যাপটপ সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখেন না, এটা অনলাইন বিজনেসের উপরে কত টা নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে?
এটাখুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন। আপনার অফলাইন বিজনেস করতে যেমন একতা দোকান লাগবে,খাতা কলম লাগবে অনলাইন বিজনেসেও কিন্তু একটা ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরম লাগবে।আর এই প্ল্যাটফরমে কাজ করতে কিন্তু আপনাকে মোবাইল বা ল্যাপটপ এর বেসিক জ্ঞান গুলো থাকতেই হবে। আসলে মোবাইলে ল্যাপটপিই হচ্ছে অনলাইন বিজনেস এর একমাত্র মাধ্যম যারা মোবাইল ও ল্যাপটপ মেইনটেইন করতে পারেনা তারা এই ব্যবসায় পিছিয়ে যাবে। আপনি ফেইসবুকে প্রোডাক্ট সেল করবেন এজন্য আপনাকে অন্তত ফেইসবুক পেইজ খলা এবং মেইন্টেইন করা জান্তেই হবে। কিভাবে পেইজে ম্যাসেজ আসে,রেপ্লাই দিতে হয়, কিভাবে ছবি তুলে আপলোড করবেন, নিয়মিত পোষ্ট দিবেন, ব্যাবসার হিসাব রাখার জন্য মোবাইলে এপ্স আছে, ল্যাপটপে স্প্রেডশীট আছে, এগুলো আপনার বেসিক নিড। এগুলো জানা থাকলে বিজনেসে প্রচুর সময় বেঁচে যায়, এর ওর কাছে সাহায্যের জন্য ছুটে যেতে হয় না। অনলাইন উদ্যোক্তা হতে হলে মোবাইল ও ল্যাপটপ অপারেটিং এর কাজ জানা বা অপারেটর রাখা জরুরি তাহলে সুবিধা হবে। কারণ এক্ষেত্রে ক্রেতার সাথে অনলাইনেই ডিসকাস করতে হয় আর আপনার ক্রেতারা কিন্তু মোবাইল ইউজাররাই।
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ সরমিন আক্তার সরমি আপু আপনি আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো কে সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দিলেন। আশা করি সকল অনলাইন উদ্যোক্তাদের জন্য কথাগুলো খুবই কাজে দিবে। আমাদের গত পর্বের ব্লগটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।