যারা নতুন উদ্যোক্তা বা যারা নতুন উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভাবছেন, তাদের জন্য ব্যবসায়িক বিভিন্ন সমস্যা সম্ভাব্য সমাধান দিতেই আমাদের এই ধারাবাহিক আয়োজন। আজ আমরা জানবো পন্য বিক্রয়ের জন্য সঠিক মার্কেট প্লেস কিভাবে খুঁজে পাওয়া যাবে, ইউটিউব দেখে কোন উদ্যোগ নিলে এর নেতিবাচক প্রভাব কি হতে পারে, পণ্য ডেলিভারি দেওয়া, পণ্যের ডেলিভারি চার্জ, পণ্য ডেলিভারি দেয়ার সময় এবং বিশ্বস্ত ডেলিভারি সার্ভিস ইত্যাদি বিষয়ক সমস্যা এবং সমাধান, পন্যের মুল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় মাথায় রাখলে আশানুরূপ লাভ করা যাবে। আজ আমাদের সমস্যাগুলোর পরামর্শ দিবেন মিতি নেওয়াজ যিনি নিজে একজন সফল উদ্যোক্তা এবং কাজ করছেন নতুন উদ্যোক্তাদের প্লাটফরম তৈরি করে দেওয়ার জন্য। মিতি নেওয়াজের সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন। এখন আমরা চলে যাবো আলোচনা পর্বে।
নতুন উদ্যোক্তাদের একটা বড় অংশের সমস্যা হল সঠিক মার্কেট প্লেসে পণ্যের বিজ্ঞাপন দেয়া, বা সঠিক ক্রেতা খুঁজে বের করা, এ ক্ষেত্রে নতুন উদ্যোক্তারা কি পরিকল্পনা গ্রহন করলে সুফল পেতে পারে।
মি.নে. যে সকল উদ্যোক্তারা সোশ্যাল মার্কেটিং বিষয়টিকে মাথায় নিয়ে নতুনভাবে বিজনেস আরম্ভ করার কথা চিন্তা করেছেন, আমার মতে তাদেরকে প্রথমেই বড় বড় গ্রূপ নিজের পণ্য বিষয়ে আলোচনা বা বিজ্ঞাপন না দিয়ে মাঝারি বা ছোট ছোট যেসকল সোশ্যাল মার্কেটিং গ্রূপ রয়েছে সেই সকল গ্রূপ বা প্লাটফর্মে পুরোপুরিভাবে অ্যাক্টিভ থেকে নিজের পরিচিতি বাড়ানো, নিজের পণ্যের বিষয়ে অন্যকে বেশি বেশি জানানো। যেহেতু গ্রাহক মাত্রই পরিচিতদের নিকট থেকে পণ্য ক্রয় করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, সেহেতু ছোট প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করলে অতি তাড়াতাড়ি কিছু ভালো ক্রেতা তৈরি হয় বলে আমি মনে করি। পরবর্তীতে যেসকল বড় সোশ্যাল মার্কেটিং এর জন্য প্ল্যাটফর্ম রয়েছে সেগুলোতে এ্যাক্টিভ হলে দেখা যায় এই ছোট গ্রূপের ক্রেতারাই রয়েছেন, তখন ছোট গ্রূপের বিক্রেতাদের মার্কেটিং সহজ হয়ে যায় এবং পরিচিতি ও পণ্যের বিজ্ঞাপন বেশি লোকের কাছে পৌঁছায়। এছাড়া পোষ্ট বুস্ট , ম্যাসেজ বুস্ট এবং পেইজ বুস্ট করার মাধ্যমেও আপনার পন্যের বিজ্ঞাপন আপনার কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার নিকট চলে যাবে আপনার বেধে দেওয়া নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। মনে রাখতে হবে আগে আপনি কি কাজ করছেন সেটা সবাইকে জানানো প্রয়োজন তারপর যাদের প্রয়োজন তারা নিজেই আপনার সাথে যোগাযোগ করবে বা প্রাইস জানতে চাইবে। কোন ক্রেতা যখন প্রাইস জানতে চায় বুঝতে হবে তার পন্য ক্রয় করার ইচ্ছা আছে ৫০% ,এরপর সে পন্য কিনবে কি কিনবে না সেটা কিন্তু নির্ভর করবে আপনার রিপ্রেসেন্ট করার দক্ষতার উপরে।
অনেকে কোন রকম দক্ষতা ছাড়াই ইউটিউব দেখে দেখে রান্না, হাতের কাজ, পেন্টিং ইত্যাদি বিষয়ক ব্যবসায় ঝাঁপিয়ে পরে, এক্ষেত্রে ব্যবসায় এর কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে?
মি.নে. আপনি যে বিষয়ে অথবা যে পণ্য নিয়ে কাজ করছেন সেই বিষয়ে যদি আপনার বিশদ জ্ঞান না থাকে তাহলে আপনি কখনোই কোন স্থানে সফল হতে পারবেন না। কেউ যদি শুধুমাত্র সময় কাটানো অথবা অন্যরা করছে তাই আমিও করি ভেবে নিয়ে কাজ আরম্ভ করেন তাহলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা মোটামুটি শূন্যের কোঠায়। আপনি যে কাজই করেন না কেন সেই বিষয়ে আপনার শতভাগ জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়। নাহলে শুধুমাত্র পরিচয় দেয়ার জন্যই ব্যবহার করা হবে যে, আমি একজন উদ্যোক্তা, প্রকৃত সফলতা পাওয়া অনেক কঠিন বলেই আমার কাছে মনে হয়। যদিও এই কথাগুলো অনেকের কাছেই ভালো লাগবে বলে মনে হয় না, তবে আমি আমার পরিচিত অনেককেই দেখেছি যারা শখের বশে বা যে বিষয়ে কাজ করছেন সেই বিষয়ে পুরোপুরি না জেনে কোন একটি বিষয়কে বেছে নিয়ে কাজ আরম্ভ করেছেন কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময় পরে তিনি হয়তো কাজটি বাদ দিয়েছেন অথবা কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়েছেন। আপনার পন্যের মান যদি ঠিক না থাকে ক্রেতারাও আপনার পন্যে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। যেমন আপনি হয়ত ইউটিউব থেকে দেখে পাস্তা বানানো শিখে মার্কেটিং শুরু করলেন ,কিন্তু আপনার রান্নাটা আশানুরূপ ইউটিউবের মতো মজাদার হলোনা, ক্রেতা কিন্তু আর আপনার কাছে ফিরে আসবে না। এভাবে আপনি জামা বা শাড়িতে পেইন্টিং করলেন, দেখতেও অনেক আকর্ষণীয় হল, কিন্তু আপনি জানেন না যে রং কিভাবে পাকা দীর্ঘ স্থায়ী করা যায়, সেক্ষেত্রেও আপনি পণ্যের মান ধরে রাখতে ব্যর্থ হবেন।তাই যে বিষয় নিয়েই আপনি কাজ করেন না কেনো আগে ভালোভাবে তা শিখে নিন, বেসিক জিনিস গুলো আয়ত্বে আনুন,তারপর অনুশীলন করুন। এরপরেই আপনি কোন কাজে হাত দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেকে প্রস্তুত বলে দাবী করতে পারেন। আসলে ধৈর্য না থাকলে ব্যবসা হয় না, আর ব্যবসা শুরু করলেও তা টিকে না। অবশ্যই অবশ্যই আপনি যে বিষয় নিয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বা কাজ করছেন সেই বিষয়ের প্রতি একটি অন্তর থেকে ভালোবাসা কাজ করতে হবে, এবং দক্ষতা অর্জন করতে হবে তবেই আপনি একসময় সফল হবেন বলে আশা রাখি।
পণ্য ডেলিভারি দেওয়া, পণ্যের ডেলিভারি চার্জ, পণ্য ডেলিভারি দেয়ার সময় এবং বিশ্বস্ত ডেলিভারি সার্ভিস প্রায় সকল উদ্যোক্তাদের একটা বড় সমস্যা। এটা কাটিয়ে ওঠার কোন পন্থা আছে কি?
মি.নে. এক্ষেত্রে আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে কোন একটি নির্দিষ্ট ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান এর সাথে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করা উচিত। প্রথমদিকে হয়তো অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান দেখলেন, তার মাঝ থেকে আপনার সাথে যাদের কমিটমেন্ট সবথেকে ভালো বলে মনে হবে তাদের সাথে পুরোপুরিভাবে একটি চুক্তিতে আসা উচিত এবং ওই প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ সংখ্যক ব্যক্তির সাথে সরাসরি যোগাযোগ বা পরিচিত হওয়া উচিত, সেটা হতে পারে ওই প্রতিষ্ঠানের সকল ঊর্ধ্বতন এবং ডেলিভারি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করা অথবা তাঁরা সোশ্যাল যে সকল মাধ্যম ব্যবহার করেন সেইসকল মাধ্যমগুলো সংগ্রহ করা, যেন জরুরী প্রয়োজনে ওই প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন।
একজন উদ্যোক্তা সাধারণত কোন কোন খরচ গুলো মাথায় রেখে পণ্যের মুল্য নির্ধারণ করলে আশানুরূপ লাভ পেতে পারে?
মি.নে. পণ্যের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাজার মূল্য বিবেচনায় নেয়া উচিত। কারণঃ বাজার মূল্য যদি আপনার পণ্যের থেকে কম হয়ে যায় তাহলে আপনার পক্ষে ক্রেতা ধরে রাখা কষ্টসাধ্য। এছাড়াও একটি পণ্যের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আপনার পণ্যের উৎপাদন ব্যয়, পণ্য প্যাকিং থেকে শুরু করে আনুষাঙ্গিক পণ্যের দাম, ইন্টারনেট বিলসহ আপনি যে সময় দিচ্ছেন এবং একটি পণ্যকে ক্রেতাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য যেসকল বিষয়গুলো যুক্ত সকল বিষয় মাথায় নিয়েই পণ্যের দাম নির্ধারণ করা উচিত। আপনি যদি কোন একটি পণ্য বিক্রয় করে সেখান থেকে লাভবান না হন তাহলে তো আর আপনি কখনও উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। একটি নির্দিষ্ট মার্জিন পর্যন্ত অবশ্যই মুনাফা রাখা উচিত।
সর্বোপরি নিজস্ব মেধা, জ্ঞান, সকলের সাথে ভালো ব্যবহার ও পণ্যের গুণগত মান এবং নির্ধারিত সময়ে পণ্যটি গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবার মাঝেই আছে সফলতা চাবিকাঠি।সকলকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়ার জন্য।প্রথম পর্ব পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
দ্বিতিয় পর্ব পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন।